সেতুর গায়ে সিডরের ক্ষত

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। ঘরের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয় স্কুলশিক্ষার্থীসহ ৪৭ জন। ভেঙে পড়ে শতাধিক সেতু ও কালভার্ট। গোটা জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।
ওই সময় সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় কয়েক মাসের মধ্যেই মানবিক বিপর্যয় অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। সংস্কার হয় সিডরে ভেঙে পড়া কয়েকটি সড়কও। তবে ব্যতিক্রম কেবল চারটি সেতু। ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের পারাপারের এ মাধ্যমগুলো সংস্কার হয়নি আট বছরেও। এতে করে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেতুগুলো। এর পরও প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে এগুলো দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠির টেকেরহাট-পোনাবালিয়া সংযোগ সেতু, ভবানীপুর বাজারসংলগ্ন সেতু, সরমহল পুনিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সেতু ও সরমহল হাসেমিয়া মোজাহেদীয়া দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন সেতু চারটি দিয়ে এখনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সেতুগুলো দেবে গেছে। কোনোটার মাঝখানের পাটাতন খুলে লোহার রড ঝুলে আছে। এমন অবস্থায় চাঁদা তুলে সেতুর পাশেই সাঁকো নির্মাণ করে এপার-ওপার যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। প্রতিদিনই স্থানীয় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে এপার-ওপার আসা-যাওয়া করছে। সরমহল পুনিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সেতুর সমস্যা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় মধ্যবয়সী এক পুরুষের সঙ্গে। তিনি এনটিভিকে বলেন, ‘সিডরে ব্রিজটা ভাইঙে যাওয়ার পর থেকে আমাদের এলাকায় অনেক সমেস্যা দেখা দিয়েছে।
ওপারে পূর্ব সরমহল গ্রাম। ওই গ্রাম থেকে এই স্কুলে ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত পড়ায়। অনেক ছাত্র আসতে হয়। তাদের সমেস্যা দেখা দেয়। এই পারে বাজার আছে। এই বাজারের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতব্যবস্থা এই পুলের ওপর দিয়া।’
ওই ব্যক্তি আরো বলেন, ‘প্রায় মাসেই দু-একটা দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত ব্রিজটার কোনো উন্নয়নকাজ আসে নাই।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বিশেষ করে আমাদের এই পুলটা (সেতু) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হতদরিদ্র এলাকায় সিডরের সময় পুলডা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক পরিমাণে। সরকারের কাছে আমরা বারবার মেম্বারের মাধ্যমে, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়ার পরও এ ব্যাপারে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ এখনো পাই না। ’
‘শ্যামপুর থেকে, মধ্য কুশঙ্গল থেকে সরমহলের উত্তর-দক্ষিণ কোনা থেকে লোকজন এইটা (সেতু) দিয়ে পারাপার করে। তালতলা যায়, নলছিটিতে যায়। থানা শহরে যায়, জেলা শহরে যায়। কাজেই অতিদ্রুত এই কাজ সমাপ্ত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি’, যোগ করেন ওই ব্যক্তি।
ভেঙে পড়া কিংবা দেবে যাওয়া সেতুগুলো সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে আশার বাণী শোনান ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক (ডিসি) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন ঝালকাঠি জেলা সিডর আক্রান্ত হয়েছিল। আমাদের সড়ক, জনপথ, ব্রিজ, কালভার্ট অনেকগুলোই ধ্বংস হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছিল। তার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে, বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে অনেক সড়ক, জনপথ, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মিত হয়েছে।’
‘লক্ষ করা যাচ্ছে, এখনো কিছু কিছু এলাকায় কিছু কিছু কালভার্ট, ব্রিজ সংস্কার হয়নি, পুনর্নির্মাণ হয়নি। যেমনটি আছে টেকেরহাট-পোনাবালিয়া সেতু। এটা দুটি উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী। পুনিহাট স্কুলসংলগ্ন একটি সেতু আছে।
আরেকটি সেতু আছে হাশেমিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, এই তথ্যগুলো যে আমাদের দিয়েছেন। আমি নির্দেশ দিয়েছি, সেতুগুলোর বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রাক্কলন তৈরি করে ঢাকায় প্রেরণ করার জন্য। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে খুব দ্রুতই এগুলোর পুনর্নির্মাণ সম্ভব হবে’, যোগ করেন রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া।