শ্যালায় এখনো চলছে পণ্যবাহী নৌযান, বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটছে না

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে এখনো চলছে তেল, সিমেন্টের কাঁচামাল ও সারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ। এক বছর আগে ৯ ডিসেম্বর ওই নদীতেই ডুবে যায় ফার্নেস তেলবাহী কার্গো। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা।
চাঁদপাই রেঞ্জের বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবারও এ ধরনের নৌযান চলাচলের কারণে হুমকিতে আছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। নৌযান চলাচলের কারণে ভবিষ্যতে আরো বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফার্নেস তেলবাহী কার্গোটি ডুবে যাওয়ার পরই তেল ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব সুন্দরবনের নদী ও এর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোতে। তেল ছড়িয়ে যায় পশুর নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। বনের পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্যাংকার থেকে ছড়িয়ে পড়া তেলে।
বর্তমানে এই শ্যালা নদী দিয়ে আবারও চলছে তেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো, কোস্টার ও ট্যাংকার; যা বনসংলগ্ন মানুষের দুশ্চিন্তার বড় কারণ। শ্যালা নদীর তেল বিপর্যয়ের পর আরো কয়েকটি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবন ও এর আশপাশে। তারপরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান এনটিভিকে বলেন, নৌ চলাচলের জন্য মংলা-ঘাষিয়াখালী নদী চালু হয়েছে। তারপরও সুন্দরবনের এই পথে নৌযান চলাচল আছে আগের মতোই। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারী মো. মোতালেব হোসেন এনটিভিকে বলেন, ‘ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শুধু দিনের বেলায় জোয়ারের সময় নৌযানগুলো চলাচল করছে। তবে ট্যাংকারসহ সব ধরনের নৌযানই চলছে সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে।’
এদিকে রিভার মরফোলজি ডিভিশনের বিশেষজ্ঞ এ টি এম কামাল হোসেন বলেন, ‘ছোট ছোট কিছু নৌযান চলাচল করছে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে।’ তবে চ্যানেলটি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় ও খনন করা জায়গা দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় আদৌ পুরোপুরিভাবে এই নৌপথটি চালু করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন এ টি এম কামাল হোসেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মংলা সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ বলেন, শ্যালা নদী দিয়ে কার্গো চলাচল সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। সুন্দরবনের ভেতরের এই নৌপথ বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন পরিবেশকর্মীরা। ওই পথ বন্ধের জন্য বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সুপারিশও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যার ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।