জিন্দাপার্কে ‘ইট-পাথরের’ নগর চান না কেউ

সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জিন্দাপার্ক। শুধু পার্ক বলেই শেষ করা যায় না। এখানে রয়েছে শিক্ষার উপাদান। প্রকৃতির রূপ-রসেরও গবেষণার ক্ষেত্র হতে পারে এটি।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, শহরের ফুসফুস এটি। নির্মল নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। শিশুদের ভাষা শেখার জায়গা। এই জায়গাটিকে ধ্বংস করার জন্য কতিপয় আমলা ও ভূমিদস্যু চক্রান্তে লিপ্ত। সুধী মহলের বিশ্বাস একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জায়গা ঘুরে দেখে গেলে তিনি চাইবেন না বাংলার এই অমিয় সম্পদ ধ্বংস হোক।
ঢাকার খুব কাছেই ৪০ একর ভূমির ওপর গড়ে ওঠা জিন্দাপার্কের নামেই রয়েছে একটি গ্রাম। এ পার্কে ফলদ, বনজ ও ঔষধিসহ নানা প্রকার প্রায় ২০ হাজার গাছ-গাছালি রয়েছে। গ্রামের মানুষ সমবায়ের মাধ্যমে নিজের এবং ইজারা নেওয়া ও কেনা জমি দিয়ে তিলে তিলে প্রাণপ্রিয় করে গড়ে তুলেছে এই নিসর্গকে। নৈসর্গিক পরিমণ্ডলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার কাজ করছে। শিশুদের ভাষা তৈরির জন্য কাজ করছে।
গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ তবারক হোসেন কুসুম। তাঁর প্রতি সবশ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা। কারণ তিনিই এলাকার যুবকদের সাথে নিয়ে বিশাল এই নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পুরস্কারও দিয়েছিলেন। তারপরও একটি কুচক্রী মহল নগরায়নের নামে নান্দনিক এই সম্পদ ধ্বংস করার কূটকৌশলে ব্যস্ত।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘জনগণের উদ্যোগে গড়ে তোলা পার্ক বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। শহরের ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে। এই পার্কে প্লট করা যাবে না। এই পার্কটি যেমন আছে, তেমনি করেই রেখে দেওয়া হবে।’
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন পবার সভাপতি আবু নাসের বলেন, বাংলাদেশে যে কটা ভালো পার্ক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর পার্ক হলো এই জিন্দাপার্ক। কীভাবে একটা প্রকৃতিবান্ধব পার্ক হতে পারে, এটা বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের ভেতরে একটি অংশ আছে, যারা পরিবেশ বিধ্বংস করার পরিকল্পনা করে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে উনি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বিষয়গুলো দেখেন।’
জিন্দাপার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা তবারক হোসেন কুসুম বলেন, ‘বিত্তবৈভবের জন্য আমরা কিছুই করি নাই। মানুষের জন্য করেছি। জাতির জন্য করেছি। বর্তমান সরকার এটা রক্ষা করবে এই আমাদের প্রত্যাশা।’
রাজউকসহ সংশ্লিষ্ঠদের কাছে প্রতিষ্ঠাতার প্রত্যাশা, এই পার্ক রক্ষায় তারা এগিয়ে আসবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পার্ক পরিদর্শনেরও আহবান জানান।
সুধী মহল মনে করে, কোনো সুস্থ মানুষই চাইবে না সবুজ অরণ্যটি নিঃশ্বেষ করে এখানে ইট-পাথরের নগর গড়ে উঠুক।