‘লাঞ্ছিত’ এনএসআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ

মাদারীপুরের কালকিনিতে জেলা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ‘লাঞ্ছিত’ ফিল্ড কর্মকর্তা ফিরুজুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট কেনার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনাকে সাজানো বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফিরুজুল আলম ভোট কিনতে কালকিনির হাদীপুর এলাকার জনারদন্দী ও কাষ্টগড় ভোটকেন্দ্রে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান।
তাই গ্রামবাসী টাকাসহ তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়ে তাঁকে মাদারীপুর জেলা এনএসআইয়ের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ব্যাপারে মামলা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু থানায় কোনো মামলা করা হয়নি এবং জব্দ করা টাকা থানায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানার সামনে বিক্ষোভ করে।
এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিম জানান, রাত ৯টার দিকে এক ব্যক্তি (ফিরুজুল আলম চৌধুরী) তাঁকে আড়ালে ডেকে নিয়ে তাঁদের বাড়িতে যে ভোট আছে তা টাকার বিনিময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমানের পক্ষে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় উঠান বৈঠকে অবস্থানরত প্রার্থী এনায়েত হোসেন ও সোহাগ তালুকদারকে জানান। তাঁরা এসে অন্যান্য লোকজন নিয়ে লোকটিকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে টাকা ও দুটি মোবাইল সেটসহ ওই ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনার সময় ফিরুজুল আলম চৌধুরীর জ্যাকেটের নিচে জামার পকেটে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিল, একটি নোটবুক ও দুটি মোবাইল সেট পাওয়া গেছে বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শী আল আমীন ও বেলায়েত হোসেন।
এ ব্যাপারে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ তালুকদার জানান, ফিরুজুল আলম চৌধুরী আবদুর রহিম নামের এক ভোটারকে টাকার বিনিময়ে এক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আবদুর রহিম বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি মেয়রসহ আরো লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিরুজুল আলম চৌধুরীকে আটক করে। তাঁর কাছে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল সেট পাওয়া যায়।
কৃষক লীগের নেতা বলেন, ‘মুঠোফোনের অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে ফিরুজুল আলম চৌধুরী আমাদের প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মশিউর রহমানও রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে ফিরতি ফোন করেছেন। টাকা ও মুঠোফোনে কথোপকথনে মশিউরের পক্ষে ভোট কেনা বা চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পুলিশকে ডেকে ফিরুজুল আলমকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সোহাগ তালুকদার বলেন, ‘পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে ফিরোজ নামে এবং এনএসআইয়ের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা রাত ৯টায় এমন কী দায়িত্ব পালন করছিলেন এটা আমার বোধগম্য নয়।’
কালকিনি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘এই কর্মকর্তা আগেপরেও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যে কারণে আমাকে হারাতে তিনি মশিউর রহমানের পক্ষে এই কাজ করে যাচ্ছেন। আমি তাঁর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাইছি।’
এনএসআই কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম চৌধুরী এটিকে সাজানো নাটক বলে দাবি করে এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে আওয়ামী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার আমাকে চড়-থাপড় মারেন। এরপর পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুরে এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমার অফিসার ফিরোজ স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ তালুকদার ও আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার মিলে আমার অফিসারের পকেটে টাকা ঢুকিয়ে লাঞ্ছিত করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। নির্বাচনের পর থেকেই স্থগিত হওয়া দুই কেন্দ্রের এলাকায় কোনো ব্যক্তিকেই তাঁরা প্রবেশ করতেও দিচ্ছেন না, আবার এলাকায় ঢুকতেও দিচ্ছেন না।’
গত ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এর পর থেকে এ দুটি কেন্দ্রে বাইরের লোকদের ঢুকতে দিচ্ছিল না স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।