‘বিচারের আওতায় আনা সময়ের ব্যাপার মাত্র’

ঢাকা শহরের মতো দেশের অন্যান্য স্থানেও সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
সংরক্ষিত নারী আসন ৪২-এর সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম জানতে চান, সম্প্রতি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে ঢাকা শহরের সুউচ্চ ভবনগুলোতে যে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানেও এই ব্যবস্থা করা হবে কিনা?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা করে যাচ্ছি। যেমন ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেখানে সিসি ক্যামেরা দরকার বা অন্যান্য সেগুলি করা হচ্ছে। কিন্তু এটা সারা দেশব্যাপী এভাবে করা সম্ভব না। এটা হলো বাস্তবতা।’
তবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জনগণকেই সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। কিন্তু এখানে কথাটা হচ্ছে দেশবাসীকে এখানে সচেতন হতে হবে। ইতিমধ্যেই জনগণ কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এদেরকে ধরিয়ে দিলে কিন্তু পুরস্কারও পাচ্ছে। কাজেই জনগণকেই এ ব্যাপারে আরো শক্তিশালী হতে হবে। জনগণকেই এ ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। এবং আমি মনে করি যে জনগণ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। আর ঢাকা শহরেও কিছু কিছু এলাকায় এ ধরনের সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে এবং এরকম অনেকগুলি ঘটনা ঘটেছে যা এই ক্যামেরায় রেকর্ডকৃত ছবি থেকে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। ধরা হচ্ছে, এ ব্যাপারে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার পরে অন্যান্য শহরগুলি সবগুলি তো এভাবে একবারে কভার করা সম্ভব না। তবে আমি আবারও এইটুকু অনুরোধ করব আমাদের দেশের মানুষকে আজকে যেভাবে কেউ বোমা মারতে গেলে মানুষ ধরছে, গণপিটুনি দিচ্ছে, পুলিশের হাতে সোপর্দ করছে এটাই হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আজকে মানুষকে সজাগ হতে হবে। মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’
কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সমর্থনযোগ্য না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ চাই না। আমরা শান্তি চাই। এই ধরনের কর্মকাণ্ড কখনোই সমর্থনযোগ্য না। এবং বিএনপি নেত্রী যেটা করছেন, সেটা একেবারে জনগণকে... বলতে গেলে তিনি একটা গণহত্যা করার কাজে নেমে গেছেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাস্তাঘাটে আগুন দিয়ে মানুষকে মারা এবং এটা উনি যে সরাসরি এগুলো করে যাচ্ছেন এতে তো কোনো সন্দেহ নাই। এই ধরনের কাজ যে কোনো মানুষ করতে পারে, কোনো রাজনীতিবিদ করতে পারে, এটা মাননীয় স্পিকার কখনোই বিশ্বাসযোগ্য না। যেখানে জনগণের জন্য রাজনীতি, সেখানে জনগণকে হত্যা করে কী অর্জন করতে পারে, সেটাই প্রশ্ন। আর জনগণ নিরীহ মানুষ। নিরীহ মানুষগুলিকে কেন হত্যা করবে? এই খেটে খাওয়া মানুষগুলিকে কেন হত্যা করবে? তাদের কী অপরাধ? কাজেই এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা (তা) নিচ্ছি। পাশাপাশি আজকে জনগণ যে সচেতন হয়েছে, তারা এদেরকে ধরে গণধোলাই দিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব যে যে পাড়ায় থাকেন বা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে কারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারে, সেই ধরনের সন্দেহজনক হলে সাথে সাথে তা নিকটবর্তী থানায় জানালে পরে যথাযথ ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছে। দিনরাত তারা কঠোর পরিশ্রম করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। কাজেই তাদেরকে সহায়তা করা জনগণের কর্তব্য।’
এর আগে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম প্রশ্ন করেন, হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রলবোমা মেরে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট যে অপকর্ম করছে, তাদের বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে আসলে আইনের কোনো অভাব নেই, আর তাছাড়া ট্রাইব্যুনালও গঠন করা আছে। কাজেই আইন তার আপন গতিতে চলবে, এটুকু আমি বলতে পারি। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। এতগুলি মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তা মাত্র সময়ের ব্যাপার। কারণ এটা জনগণেরই আকাঙ্ক্ষা, জনগণই এটা চায়। জনগণ যা চাইবে তাই হবে। আইন তার আপন গতিতে চলবে। এটুকু আমি আশ্বাস দিয়ে যেতে পারি।’