মীর কাসেমের আপিলের শুনানি কাল পর্যন্ত মুলতবি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি তৃতীয় দিনের মতো শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন আদালত।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে শুনানি শেষ হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।
আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এস এম শাহজাহান বলেন, ‘আজ মামলার ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগের ওপর শুনানি হয়েছে। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি হয়। পরে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ মামলা মুলতবি করেন।’
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ছিল সপ্তম মামলা।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে। দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ পাঁচ ভলিয়মে এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রসিকিউশন আনীত ১৪টির মধ্যে মোট ১০টি অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হন। সেগুলো হলো—২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। তার মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ ছাড়া বাকি ১২টি অভিযোগই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।