পঞ্চগড়ে পুরোহিত হত্যায় ‘আইএসের’ দায় স্বীকার

পঞ্চগড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরোহিতকে হত্যার দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। আজ রোববার সকালে এই হত্যাকাণ্ডের পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটির ওয়েবসাইটে আইএসের দায় স্বীকারের এই বার্তা প্রকাশিত হয়েছে।
সাইটের খবরে বলা হয়েছে, দি ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শ্রীশ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এদিকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এই হত্যায় দায় স্বীকার করেছে আইএস।
আইএসের টুইটারে আরবিতে লেখা বার্তাটিও প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সেখানে লেখা আছে, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায়, খিলাফতের নির্ধারিত সৈনিকেরা পঞ্চগড়ে দেবীগঞ্জ মন্দিরের স্থপতি ও প্রধান পুরোহিত এবং নাস্তিক হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যা করেছে। এ অপারেশনে মুজাহিদদের হালকা অস্ত্রের আঘাতে তাঁর আরেক সহযোগী আহত হয়েছে।’
মুজাহিদরা নিরাপদে নিজেদের আস্তানায় ফিরে যেতে পেরেছে বলেও আইএসের টুইটে দাবি করা হয়।
এর আগে আজ রোববার সকাল ৭টার দিকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় শ্রীশ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা। গুলি করা হয় গোপাল চন্দ্র রায় (৩৫) নামে এক সাধুকে। এ ছাড়া ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন মঠের পাশের এলাকার নিতাই পদ দাস (৪০)। গুলিবিদ্ধ পুরোহিত গোপাল চন্দ্র রায়কে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন দুর্বৃত্ত এ হামলায় অংশ নেয়। ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের করতোয়া নদীর পশ্চিম পাশে শ্রীশ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠ। সকালে ওই মঠের পুরোহিতসহ তিন সাধু পূজা-অর্চনা করছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে যজ্ঞেশ্বর রায়সহ অন্যরা মঠ থেকে বেরিয়ে আসেন। দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
এরপর মঠের বাইরে বাড়ির বারান্দায় যজ্ঞেশ্বরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা গেটে হত্যা করা হয়। এ সময় গোপাল চন্দ্র পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর পায়ে ও হাতে গুলি লাগে। আরেক পুরোহিতের ওপর ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মঠের বাইরে কাজ করছিলেন নিতাই। তাঁর ওপরও ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, জেলার সব হিন্দু ধর্মশালায় নিরাপত্তা জোরদার ছিল। কারা হত্যাকারী এবং কী কারণে এ হামলা হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত না করে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতার জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে দুর্বৃত্তদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
এদিকে পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এর আগে শিয়া মসজিদসহ বিভিন্ন জায়গায় যারা হামলা চালিয়েছে, তারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।