মেহেরপুরকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা

কিছুদিন আগেও মেহেরপুর জেলায় বাল্যবিবাহের হার ছিল সারা দেশে সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিকে শূন্যের কোটায় নামানোর ঘোষণা দিয়ে সাত মাস আগে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের অভিযান। যেখানেই বাল্যবিবাহ সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে চলে গণসচেতনতা, দরিদ্রদের মধ্যে ছাগল বিতরণসহ নানা কার্যক্রম।
সেসব অভিযানের ফলস্বরূপ আজ শনিবার মেহেরপুর জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন।
‘আর নয় বাল্যবিবাহ’ এই অঙ্গীকার করিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি বলেন, আজ থেকে মেহেরপুর জেলায় আর নয় বাল্যবিবাহ।
জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, দরিদ্রতা, অশিক্ষা ও কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিবাহ হয়। শুধু আন্তরিকতা দিয়েই বাল্যবিবাহমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক আব্দুল হালিম ও সেভ দ্য চিলড্রেনের আবাসিক প্রতিনিধি টিম হোয়াইট।
সরকারি কর্মকর্তা, বিবাহ নিবন্ধক (কাজি), ইমাম, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০ হাজার মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের এ আন্দোলনে শরিক হয়েছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাও। পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির ‘বিকল্প পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি প্রকল্পের’ উপজেলার সমন্বয়কারী ফারজানা ববি বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাঁরা অনেক আগে থেকে কাজ করছেন। তবে জেলা প্রশাসনের আন্দোলনের ফলে তাঁদের কাজে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি হয়তো মেহেরপুরে থাকব না। কিন্তু বাল্যবিবাহ বন্ধের সুফল পাবে এই জেলার মানুষ। আমার সঙ্গে বাল্যবিবাহ বন্ধের সামাজিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হেমায়েত হোসেন (রাজস্ব) জানান, বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা হিসেবে বাংলাদেশে মেহেরপুর মডেল। এই পরিস্থিতি ধরে রাখতে জেলার জনপ্রতিনিধিদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান (সার্বিক) জানিয়েছেন, দুস্থ অনেক পরিবারে ১৮ বছরের কম বয়সের কন্যা আছে। সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। নামমাত্র সুদে ওইসব পরিবারকে গবাদিপশু কিনে দেওয়া হয়েছে যাতে বিয়ের সময় তারা অর্থনৈতিক বিপাকে না পড়ে।
কিশোরী মেয়ের বিয়ের জন্য আবেদন : বাল্যবিবাহ নিয়ে মেহেরপুরে চলমান অভিযানের মধ্যে ঘটেছে একটি ঘটনা। জেলার গাংনী উপজেলার পলাশীপাড়ার মালেকা খাতুন নামের এক মা তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীর মেয়ের বিয়ের অনুমতি চেয়ে ১০-১৫ দিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে মেহেরপুরে বাল্যবিবাহ বন্ধ আন্দোলনের মুখপাত্র জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমিই বোধ হয় দেশের প্রথম কোনো জেলা প্রশাসক যার কাছে বাল্যবিবাহের অনুমতি চেয়ে আবেদন এসেছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, মেহেরপুর জেলার মানুষ বাল্যবিবাহের ব্যাপারে এখন সচেতন হচ্ছে।’
এ আবেদনের কপিটিকে জেলা প্রশাসক সারা জীবন সংরক্ষণ করবেন বলেও জানান। বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের দিন বদলের অঙ্গীকার রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ৮ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ করা হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা না গেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।