নিরাপত্তাহীনতায় গজনী অবকাশের পর্যটকরা

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে আসা এক দর্শনার্থী আজ শুক্রবার সকালে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন।
আহত দর্শনার্থীর নাম আবুল হোসেন (৩০)। তিনি ঢাকার খিলগাঁওয়ের আমিন উদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে।
এ ছাড়া বগুড়া থেকে আসা পিকনিকের একটি বাসের কয়েকজন একই সময় অবকাশ কেন্দ্রের গারো পাহাড়ের ভেতর বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। এর মধ্যে তিনজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেট ও টাকা-পয়সা রেখে দেয় ছিনতাইকারীরা। একই সঙ্গে হুমকি দেয় বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্য। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে দ্রুত তারা বাস নিয়ে চলে যায়।
আহত আবুল হোসেন জানান, তিনি আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র থেকে ছোট গজনী এলাকার গঙ্গামন্দিরের পাশে যাচ্ছিলেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাঁকে আক্রমণ করে। ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর হাত ও কোমরের পাশে কেটে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
এদিকে আজকের দুটি ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি গজনী অবকাশ কেন্দ্র এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিপত্তিতে রয়েছেন সেখানে দোকানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা ইজারা নেওয়া ঠিকাদাররা।
অবকাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁরা স্থানীয় বখাটে ও ছিনতাইকারীদের একটি তালিকা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের হাতে দিয়েছেন। কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবু পুরোপুরি ছিনতাই বন্ধ হয়নি। এভাবে চললে লোকজন আসা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করছে। এর আগেও কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি বলেন, পর্যটনকেন্দ্রটি মূলত জেলা প্রশাসনের অধীনে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ওখানে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি বিজিবির দেখার কথা। উপজেলা শহর থেকে পুলিশ দিয়ে বিশাল একটি বন এলাকায় পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি কষ্টকর। এ ছাড়া যারা পর্যটন কেন্দ্রটির দায়িত্বে আছে কিংবা বিভিন্ন স্থাপনা ইজারা নিয়েছে তাদেরও তো নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর তাহলেই হয়তো পুরোপুরি নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম রেজা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেখার কথা। আমরা আমাদের উপজেলা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনের চেকপোস্টে প্রতিটি গাড়িতে বলে দেই যেন দর্শনার্থীরা বনের বেশি গভীরে না যায়।’
উপজেলা প্রশাসন বা যারা পর্যটন কেন্দ্রটির বিভিন্ন স্থাপনা ইজারা নিয়েছে তাদের পক্ষে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে অপরাধ দমন এবং অপরাধীদের ধরা মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, অবকাশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের কাছে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। তারা সুনির্দিষ্ট নাম ঠিকানা দিয়ে তালিকাও দিয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কাজ তেমন একটা কিছু হয়নি। দু-একজন ধরা হলেও ছিনতাইয়ের মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গারোপাহাড়বেষ্টিত সবুজ বনানীর দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত ঝিনাইগাতী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা গজনী অবকাশ কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ জায়গায় বেড়াতে আসে। কিন্তু সম্প্রতি ছিনতাই, নারীদের লাঞ্ছনা ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হয়তো পর্যটন কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে আর কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসবে না এ জায়গায়। তখন সমস্যায় পড়বে এই পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহকারী পরিবারগুলো।