ব্লাস্টে আক্রান্ত ২৭৬ একর গমের ক্ষেতে আগুন

ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চিৎলা পাট ও বীজ খামার এবং সদর উপজেলার বাড়াদী পাট ও বীজ খামারের ২৭৬ একর গমের ক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বীজ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশক্রমে ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ শুক্রবার সকালে আগুন দিয়ে গমক্ষেত পুড়িয়ে দেয়।
এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও চিকিৎসকদের একটি করে টিম উপস্থিত ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের নূরনগর ও দত্তনগর খামারের ২৭২ একর জমির গমক্ষেত আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।
চিৎলা খামারের যুগ্ম পরিচালক আবির হোসেন জানান, উন্নত বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চিৎলা খামারে তিনটি প্লটে দেড়শ একর জমিতে গম চাষ করা হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া থাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয় গম ক্ষেতে। এতে গমের শীষ মরে যায় ও পাতা হলুদ রং ধারণ করে। এ গম ক্ষেত থেকে উৎপাদিত বীজে ব্লাস্ট ভাইরাসের জীবাণু থাকতে পারে এবং তা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ জন্য পরামর্শ চেয়ে গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশক্রমে ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গমক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের জিএম (পাটবীজ) নূর মোহাম্মদ জানান, ১৯৮৫ সালে প্রথম ব্রাজিল ও লাতিন আমেরিকায় এ রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবারই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ভবিষ্যতে এ রোগ যাতে বিস্তার লাভ না করতে পারে এ জন্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গমক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নূর মোহাম্মদ আরো জানান, গমক্ষেতে এ রোগ দেখা দেওয়ায় চাষিদেরও উৎপাদিত গম বীজ হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানে এ রোগ না দেখা দেওয়ায় ওই এলাকা থেকে গমবীজ চাষিদের সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। এতে গমবীজের সংকট হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
চলতি বছরে মেহেরপুরের এ দুটি পাটবীজ খামারের ২৭৬ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন গমবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এ বছর মেহেরপুরসহ কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলায় এই ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ চাষিরা আগেই আগুন দিয়ে গমের জমি পুড়িয়ে ফেলেছে।
প্রসঙ্গত ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলেই প্রথমবারের মতো গমক্ষেত ব্লাস্ট ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। তবে ওই দেশগুলোয় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান কৃষকরা।