জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামী শিক্ষার প্রসারে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করবে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য আছে যে আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটা মডেল মসজিদ তৈরি করব। একটা আধুনিক মসজিদ তৈরি করব। এরই মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটা মসজিদ নির্মাণ হবে। সেই মসজিদটা একটা মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে হবে। সেখানে যেমন মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা হবে, কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাঁর দাফনের, জানাজার, গোসল করানোর ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের যাঁরা হজযাত্রী, তাঁদের প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়া বা শিক্ষা দেওয়া, সেটাও সেখানে বসে করতে পারবেন। মসজিদভিত্তিক শিক্ষা বা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা কার্যক্রম এবং ইসলামী যে সাংস্কৃতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা—এ শিক্ষাগুলো যেন যথাযথভাবে দেওয়া যেতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা করে আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটা করে মডেলে মসজিদ নির্মাণ আমরা করব।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আপনারা জানেন যে এটার জন্য অ্যাডভার্টাইজ (বিজ্ঞাপন) দেওয়া হয়েছে। এর একটা ডিজাইন বা প্ল্যান কেউ দিলে আমরা সেটা দেখে নির্দিষ্ট করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমরাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলায় জেলায় অফিসগুলি এবং তাদের কর্মকর্তাদের আমরা রাজস্ব খাতে নিয়ে আসি, যাতে করে তারা সেখানে সঠিকভাবে ইসলাম প্রচার করতে পারে।’
আগুন দিয়ে দলিলপত্র পুড়ে ফেলার রহস্য কী?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘উপজেলা-জেলায় ভূমি অফিসগুলি, সেই ভূমি অফিসগুলিতে পর্যন্ত তারা (বিএনপি-জামায়াত) আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে। এর অর্থটা কী?’ তিনি বলেন, ‘ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে দলিলপত্র পুড়ে ফেলার কী রহস্য থাকতে পারে? আমি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি, যে করেই হোক এগুলি খুঁজে বের করতে হবে এবং যারা আগুন দিয়ে পোড়াবে, এই ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে জরুরি দলিলপত্র যারা পোড়াচ্ছে, তাদের কোনো জমির ওপর, তারা তাদের বাপদাদার যত জমি আছে, সব বাজেয়াপ্ত করা হবে। কোনো জমির মালিক তারা থাকতে পারবে না। ওই এলাকায় তারা থাকতে পারবে না। ওই এলাকার কোনো জমি তাদের থাকবে না। সে ব্যবস্থাটাই আমাদের নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের ক্ষতি করার জন্য, মানুষকে এভাবে কষ্টে ফেলার জন্য এ ধরনের অপকর্ম কোনো মানুষ করতে পারে, এটা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু এরা এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।’
‘জাতির পিতা ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করতেন’
বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবাইকে মোবারকবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন যে ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমি আজকের দিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শ্রদ্ধা জানাই মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শাহাদাতবরণ করেছেন, তাঁদেরকে। শ্রদ্ধা জানাই আমার দুই লাখ মা-বোন, যাঁদের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
আমাদের জাতীয় চার নেতা এবং যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, সকলকে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করতেন, গুরুত্ব দিতেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত অর্থ যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং আমাদের এই পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান ও ইসলামের প্রচার-প্রসার যাতে ঘটে।’ তিনি বলেন, “১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমরা লেবাসসর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই, আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হজরত রাসূলে করিম (সা.)-এর ইসলাম।’ অর্থাৎ নবী করিম (সা.)-এর যে ইসলাম, তাঁর যে চিন্তাভাবনা, সে চিন্তাভাবনা তিনি ধারণ করতেন এবং সব সময় তিনি যেটা বলতেন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন আওয়ামী লীগ কখনো করবে না। আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত থাকবে।”
ইসলাম মানবতার ধর্ম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তি, সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মই সবচেয়ে বেশি মানবতার কথা বলেছে এবং মানবতাকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা দেখেছি, আমাদের দেশেই আমাদের এই পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে, ব্যবহার করে বরং আমাদের ধর্মের বিরুদ্ধে যেমন কাজ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এটাই আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্য।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমরা দেখেছি একই ঘটনা। মানুষ হত্যা করা, অগ্নিসংযোগ করা, মা-বোনের ইজ্জত লোটা, লুণ্ঠন করা—নানা ধরনের অপকর্ম ধর্মের নাম ব্যবহার করে করা হয়েছে। এতে কী হয়েছে? আমাদের যে পবিত্র ধর্ম ইসলাম, সেই ধর্মেরই বদনাম হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। হয়তো দলের নামের সাথেও ইসলাম লাগানো আছে। তাদের দোসর বিএনপি। এরা মিলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা... এটা তো গণহত্যার শামিল।
তারা গণহত্যাই করছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা রেহাই পাচ্ছে না। খেটে খাওয়া মানুষ, বাসের ড্রাইভার বা হেলপার—তাদের ওপর আঘাত করছে।’
টেরোরিস্টদের দেশ নাই
কিছুদিন আগে ইতালির মিলানে একটি সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা টেরোরিস্ট, অর্থাৎ যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্মও নাই, তাদের কোনো সীমানা নাই। তারা কোনো দেশের না।
জঙ্গিবাদটাই তাদের ধর্ম। এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই।’ তিনি বলেন, ‘প্যালেস্টাইনে ইহুদিরা যে আমাদের মুসলমান নারী ও শিশুদের হত্যা করল ব্যাপক হারে, যুবকদের হত্যা করল, কেউ একটা প্রতিবাদ করেনি। বোধ হয় একমাত্র আমিই বাংলাদেশের হয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এমনকি প্যালেস্টাইনিদের জন্য কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে আমরা তা-ও পাঠাব।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।