ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের গোপন নম্বর হ্যাক করে টাকা চুরি!

টাকা পাঠানোর প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের গোপন নম্বর ‘হ্যাক’ করে পূবালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে টাকা তোলার সময় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শাখা পূবালী ব্যাংকে টাকা তোলার সময় ফারুক মিয়া (৩০) নামের ওই ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
আটক ফারুক মিয়া উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এর আগে একই এলাকায় ‘হ্যাক’ করে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নেন ফারুক।
গোপন নম্বর হ্যাক করার ব্যাপারে বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে একটি চক্র ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে’র মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের গোপন নম্বর ‘হ্যাক’ করে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের অর্থ চুরি করছে। ওই চক্রটিই আজ রোববার বিকেলে ঘোড়াশাল পূবালী ব্যাংক শাখায় আসে।
ঘোড়াশাল পূবালী ব্যাংক শাখার ব্যাবস্থাপক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কুয়েত প্রবাসী সায়েম রমিজ উদ্দিন তাঁর ভাই মো. আলামিন মিয়ার নামে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বাংলাদেশে পাঠান। হ্যাকার চক্রের সদস্যরা গোপন নম্বরটি হ্যাক করে ফেলে। হ্যাকারদের একজন ফারুক মিয়া গোপন নম্বর ও নকল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমাদের শাখায় টাকা উত্তোলন করতে আসেন। টাকা দেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও জুয়েল মিয়ার সন্দেহ হয়। পরে তারা প্রবাসীর ভাই আলামিনের কাছে ফোন করেন। পরে আলামিন নামধারী ফারুক মিয়াকে চ্যালেঞ্জ করলে সে দৌড়ে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।’
এদিকে ঘোড়াশাল শাখা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটক হওয়া ফারুক গত সপ্তাহে গোপন নম্বর ‘হ্যাক’ করে তাদের শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নেয়।
অগ্রণী ব্যাংকের ঘোড়াশাল শাখার ব্যাবস্থাপক আব্দুর রহমান বলেন, ‘ফারুক গত সোমবার ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক গ্রাহকের গোপন নম্বর চুরি করে আমাদের শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নেয়।’
কীভাবে তুলে নেয় জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের পদ্ধতি হলো, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর সেখানকার ব্যাংক থেকে একটি গোপন নম্বর দেওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা ওই গোপন নম্বর, নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে টাকা প্রদান করেন। হ্যাকাররা গোপন নম্বর হ্যাক করার পর নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে টাকা নিতে আসে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করার কোনো পদ্ধতি ব্যাংকে নেই। তাই গোপন নম্বরের ওপর ভিত্তি করেই টাকা দেওয়া হয়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে হ্যাকাররা।’
আটক ফারুক পুলিশকে জানিয়েছে, কুয়েত থেকে জুয়েল নামের এক হ্যাকার গোপন নম্বর সরবরাহ করে। পরে সেই নম্বর নিয়ে নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে সে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তার কাছ থেকে একাধিক নকল পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।