বাঁশখালী হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে দায়ী করলেন এমপি!
বাঁশখালী সংসদীয় এলাকার সদস্য (এমপি) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দাবি করেছেন, গণ্ডামারা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ফাও একটা চাঁদাবাজি করার জন্য ঘটনা করিয়েছে। সহজ সরল মানুষ, লেখাপড়া জানে না, মিথ্যে কথা বানায়ে বলে তাদের একটা উসকানি দেওয়া হয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ষোলশহরের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান এ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর। তবে পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন দেওয়া হয়েছে। ওখানে বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম গিয়েছে, আমীর খসরু মাহমুদ গিয়েছে। পলিটিক্যালি খালেদা জিয়া তাঁদের (জাফরুল-খসরু) পাঠিয়েছে এখানে কোনো প্রজেক্ট হতে পারবে না। বিভিন্ন রকমের সংস্থা বক্তব্য দিয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রজেক্টটা অনুমোদন হয়েছে। সে সময় এমপি ছিলেন জাফরুল ইসলাম। উনি তো নিজে গিয়েছেন এস আলম গ্রুপের সঙ্গে জায়গা ক্রয় করার জন্য। আজ কেন এর বিরোধিতা করছেন? তখন উনি জানতেন না যে এটা কয়লাভিত্তিক? আর আপনারাও তো সবাই শিক্ষিত মানুষ। কয়লা ভিত্তিক হলে পরিবেশ দূষণ হবে কি না আপনারাও জানেন। আপনারা খবর নেন ওই এলাকার মানুষগুলো আবেগপ্রবণ এবং সহজ সরল। এগুলো যেকোনো কথায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। এর জন্য দায়ী হচ্ছে ওই সন্ত্রাসী লিয়াকত। লিয়াকত তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গুলি করেছে। গণ্ডামারায় পুরো এলাকায় কোনো উত্তেজনা নেই। শুধু তাঁর ওয়ার্ডেই এ সমস্যা হচ্ছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যারা গুলিতে মারা গেছে, এরা তো তাদের (লিয়াকত) লোক না। এগুলো তো নিরীহ সাধারণ লোক।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিহতদের স্বজনদের আমি জিজ্ঞাসা করেছি, কার গুলিতে এ রকম হলো। ওরা বলেছে, লিয়াকতের পক্ষের লোকজনের গুলি গায়ে লাগে। এটা ছিটা গুলি। রাইফেলের গুলি না।’
প্রকল্পটির শুরু থেকে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম প্রকল্পের জমি ক্রয়-বিক্রয়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সাহেবকে বেশ কয়েকবার গণ্ডামারা নিয়ে যান। সেখানে জায়গা ক্রয় করতে উদ্বদ্বু করেন। জাফরুল সাহেব এলাকায় প্রকল্পের জন্য জমি ক্রয় করতে কয়েকটি কমিটি গঠন করেন এবং নিজের নামে (জাফরুল ইসলাম) বেশ কিছু জায়গা ক্রয় করেন।’
মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে এক সপ্তাহ আগে তাঁর পরিচয় হয়েছে। এর আগে পরিচয় ছিল না। তাঁর সঙ্গে কোনো দিন দেখাও হয়নি। তবে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে তিনি এ প্রকল্পের সাথে থাকবেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নিহতের পরিবার প্রতি ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলে মোস্তাফিজুর রহমান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেহেনা আকতার কাজমী উপস্থিত ছিলেন।
গণ্ডামারা গ্রামে ‘এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেড অ্যান্ড এসএস পাওয়ার-২ লিমিটেড’ নামে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ওই কেন্দ্রে। এস আলম গ্রুপ, সেপকো থ্রি এবং এইচটিজি চায়নার যৌথ মালিকানায় প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি স্থাপন করা হবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায়। এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল গণ্ডামারা গ্রামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে চারজন নিহত হন।
আহতদের হাতে হাতকড়া
গত সোমবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম গন্ডামারা এলাকায় সংর্ঘষের এ ঘটনা গুরুতর আহত দুই জন কে হাতকড়া পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সময় নিহত মরতুজা ও আনোয়ারের ভাতিজা আবদুস সালাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ও মো. ইলিয়াছ নামে আরেক যুবক ২৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের স্বজনরা জানান, গত বুধবার থেকে তাঁদের হাতকড়া লাগিয়ে চিকিৎসা চলছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সালামের এক স্বজন জানান ,বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাতকড়া খুলে দিয়েছে। তবে এসব ওয়ার্ডে সাংবাদিকদের প্রবেশধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। জেলা পুলিশের সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন।