আগুন থেকে সুন্দরবন বাঁচাতে ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’

সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড বন্ধ করতে পাঁচটি ‘ফায়ার ওয়াচার টিম’ গঠন করেছে বন বিভাগ। এসব দল নাশকতা রোধে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি ও টহল দেবে।
আজ মঙ্গলবার পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইফুল ইসলাম এ তথ্য দেন।
এদিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আব্দুল্লার ছিলার গহীন অরণ্যের আগুন নিভে গেলেও পুড়ে গেছে প্রায় আধা একর বনাঞ্চল। গতকাল সোমবার ভোরে এ আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের কাজ শুরু করেছেন।
বন বিভাগের দুই মামলা
আব্দুল্লার ছিলা এলাকায় আগুন লাগানোর অভিযোগে শরণখোলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় মামলা করেছে বন বিভাগ। আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর অজ্ঞাত রাখা হয়েছে পাঁচজনের নাম। মঙ্গলবার বিকালে থানায় চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে বন আইন ১৯২৭ সালের ২৬ (ক) ও (গ) ধারাসহ নাশকতার এই মামলাটি দায়ের করেন। এই নিয়ে সুন্দরবনের একই এলাকায় গত ২০ দিনের মধ্যে তিনবার আগুন দেওয়ার ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল রাতে একই এলাকার বনে চোরাই পথে মাছ চাষ করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো তাঁদের ছয়জনকে শনাক্ত করে গত রোববার আদালতে মামলা করা হয়। বিচারক আসামিদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছয় আসামি বা তাঁদের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে আবারও সুন্দরবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়ে জড়িতদের সর্ম্পকে তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে।’
কথিত ইজারার নামে সুন্দরবনের বিলে অবৈধ মাছ চাষে বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান সাইদুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও আগুনে বনজ সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আসামিরা পলাতক
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ আলম মিয়া জানান, সুন্দরবনের বিলে মাছ চাষ করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের আটকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। বন বিভাগের দায়ের করায় মামলার ছয় আসামি হচ্ছে, উপজেলার রাজাপুর গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারী, আল আমীন হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, সাহেব হাওলাদার, খলিল হাওলাদার ও ছগির হাওলাদার। এসব আসামিসহ সহ মঙ্গলবার বিকালে দায়ের করা নাশকতার মামলার আসামিদেরও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে আছে। তিনি আরো জানান, আসামিরা বর্তমানে পলাতক।
মাছ শিকার করতে আগুন!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর এলাকার শাহজাহান শিকারীর নেতৃত্বে একটি মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর সুন্দরবনের কর্মকর্তাদের লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সুন্দরবনের কয়েকটি বিল অলিখিতভাবে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে থাকে। মাছের বিল তৈরি করতে ওই সব বিলে জমে থাকা গাছের পাতা উঠিয়ে ও নিচু এলাকা পরিষ্কার করতে শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগানো হয়। এরপর বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। অবৈধ কারেন্ট জালের মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। এই কাজের সঙ্গে বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে তাঁরা দাবি করেন।