শরীয়তপুরে আ. লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জন, সংঘর্ষ

ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শরীয়তপুরের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শরীয়তপুরের ১৪টি ইউপিতে আজ ভোট গ্রহণ করা হয়।
সদর উপজেলার ১১টি ও গোসাইরহাট উপজেলার পাঁচটিসহ মোট ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনের আগমুহূর্তে নাগেরপাড়া ও সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র ও নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে শরীয়তপুরের দুটি উপজেলার মোট ১৪টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল থেকেই বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিট ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আহম্মদ উল্লাহ মিয়া নামে একজনকে আটক করে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তুলাশার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিট ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর দেড়টার দিকে শৌলপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারেংগা ছামেদ মাদবরের কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা ২০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা হামলা চালায় ও ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে। হামলায় রাশেদা বেগম (৪০) নামের এক ব্যক্তি আহত হয়। পরে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়।
সারেংগা ছামেদ মাদবরের কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মোতালেব খান বলেন, হঠাৎ করে একদল নৌকার সমর্থক কেন্দ্রে প্রবেশ করে। দুটি ব্যালট পেপারের বই নিয়ে যায় যাতে ২০০ ব্যালট রয়েছে। এ সময় তারা ব্যালট বাক্সও ভাঙচুর করে। পরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে ওপরের নির্দেশে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
গোসাইরহাট
এজেন্ট বের করে দিয়ে নৌকায় জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন গোসাইরহাট ইউপিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী তারেক আজিজ মোবারক ঢালী।
অন্যদিকে কোদালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ মনিরউজ্জামানের ভাই সৈয়দ বোরহান উদ্দিনের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের সমর্থকরা। এ সময় সৈয়দ বোরহান উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করে তারা। বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও হামলার অভিযোগ এনে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ মনিরউজ্জামান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফয়জুল কবীর বলেন, ‘কোনো প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি এবং ভোট বর্জন করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনাদের মাধ্যমে যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
গোসাইরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সগির হোসেন বলেন, গোসাইরহাট উপজেলার চারটি ইউনিয়নেই শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। টুকিটাকি কোনো গোলযোগের সৃষ্টি হওয়ার আগেই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পুলিশ ও বিজিবি পাঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও ভোট কাটা বা প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ জালাল উদ্দিন বলেন, তৃতীয় ধাপে এবারের নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর ও গোসাইরহাট উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নাগেরপাড়া ইউনিয়নের হেলাল উদ্দিন নামে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ভোটার তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম না থাকায় বাছাইপর্বে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া হয়। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ায় হেলাল উদ্দিন নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। শুনানি শেষে উচ্চ আদালত নাগেরপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থগিত আদেশ হাতে পৌঁছার পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সীমানা ও ভোটার তালিকা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় আদালতের নির্দেশে মাহমুদপুর ইউপি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।