হাঁস পালন করে অভাব দূর করেছেন মোখলেছুর

নওগাঁর মান্দা উপজেলার চেরাগপুর গ্রামের বেকার যুবক মোখলেছুর রহমান হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সংসার থেকে অভাব দূর হয়ে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এ সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেকেই হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।
মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী আঙ্গুর বেগম, দুই মেয়ে তানিয়া ও সামিয়া এবং ছেলে তামিমকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। অভাবের তাড়নায় সংসারের প্রতি এক রকমের অনীহা সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর। হাঁস পালন করে ক্রমান্বয়ে তাঁর সংসারে স্বচ্ছলতার আলোকরশ্মি হাতছানি দিতে শুরু করে। এখন তিনি স্বাবলম্বী। বড় মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন একটি স্বচ্ছল পরিবারে। ছেলে তামিম গ্রামের প্রথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে সামিয়ার এখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। হাঁস পালন করে তিনি এ পর্যন্ত সাড়ে চার বিঘা জমি কিনেছেন। যাতে হাঁস পালনের পাশাপাশি ফসল উৎপাদন করে থাকেন।
মোখলেছুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চেরাগপুর হলেও প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলা সদরের কয়াপাড়া কামার কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আত্রাই নদীতে এসে হাঁস পালন করছেন। নদীর তলদেশের পানিতে উভয় পাশে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে হাঁসগুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। আর যখন মনে হচ্ছে এসে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। রাতে নিরাপত্তার জন্য হাঁসগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। এখন গ্রামের চারদিকে বোরো আবাদের কারণে সেখানে হাঁস পালনের সমস্যা। বোরো আবাদ কাটামাড়াই শেষ হলে তিনি তাঁর হাসের দল নিয়ে আবার ফিরে যাবেন গ্রামে।
মোখলেছুর রহমান জানান, প্রায় ১২ বছর আগে ২৫০টি বাচ্চা দিয়ে হাঁস পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ক্যাম্বেল, জেলডিন, খাকি, রানা প্রজাতিসহ মোট ৮০০ হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ হাঁস রয়েছে ৮০টি। প্রতিদিন তাঁর এই খামার থেকে প্রায় ৩০০টি ডিম উৎপাদিত হয়। পাইকারী দরে প্রতিদিন ডিম বিক্রি করেন ৮ টাকা ধরে মোট দুই হাজার ৪০০ টাকা। এ সব হাঁসের জন্য প্রতিদিন খাওয়ার বাবদ খরচ হয় এক হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তাঁর মোট আয় থাকে এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে শুধু ডিম বিক্রি থেকে প্রতি মাসে তাঁর গড় আয় ৪৫ হাজার টাকা। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য বগুড়া জেলার সান্তাহার এলাকার লোকজন তাঁর খামারের নিয়মিত খরিদ্দার। তাঁরা বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০-২৫০টি ডিম দেয়। এভাবে দুই বছর ডিম দেওয়ার পর সবগুলো হাঁস বিক্রি করে দেওয়া হয়। ঢাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বড় ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যান। ১০০টি হাঁস প্রায় ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া খুচরাও ২৫০ টাকা পিচ বিক্রি করা হয়। হাঁস বিক্রি থেকেও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন।
হাঁস খামার দেখাশোনার জন্য তাঁর খামারে কাজ করেন আবুল হোসেন। মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পান তিনি। গত এক বছর ধরে মোখলেছুর রহমানের কাজে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন তিনি। হাঁস পালনের তাঁর এই লাভ দেখে এলাকার ১২-১৫ জন যুবক হাঁস পালন শুরু করেছেন। তারাও স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
একই গ্রামের মুনতাজ আলী তাঁর কাছ থেকে ডিম কিনে বাচ্চা ফুটিয়ে শুরু করেছেন খামার গড়ে তোলার কাজ। তাঁর খামারে এখন ৭৫০টি হাঁস আছে। তিনি বলেন, ‘মোখলেছুর রহমানকে দেখে হাঁস পালন করছি। কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিই।’ হাঁস পালনে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি বিক্রি করে থাকেন তিনি। লাভও ভালো হয়। এ জন্য হাঁস পালনে আগ্রহটা বেশি।
মোখলেছুর রহমান জানান, হাঁস পালনের বড় সমস্যা ডাক প্লেগ রোগ। হাঁসের রোগ-বালাই দেখা দিলে তিনি স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন।
মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, মোখলেছুর রহমান তার যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ ধরনের আগ্রহী খামারিদের সব সময় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।