পাঁচ রাজাকারের দণ্ডাদেশ, কিশোরগঞ্জে আনন্দ মিছিল
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চার চিহ্নিত রাজাকারের ফাঁসি ও একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিচারপতি মো. আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া চার রাজাকার হলেন উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের অ্যাডভোকেট এ টি এম শামসুদ্দিন আহমেদ (৬০) ও তাঁর ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এ টি এম নাসির উদ্দিন আহমেদ (৬২), চরপাড়া গ্রামের রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান (৮৮) এবং খুদির জঙ্গল গ্রামের হাফিজ উদ্দিন (৬৬)।
আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন হাইদনখালী গ্রামের আজহারুল ইসলাম (৬০)।
এদের মধ্যে কেবল শামসুদ্দিন আহমেদ কারাগারে আটক আছেন। বাকি চারজন পলাতক। ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শামসুদ্দিন আহমেদ।
রায় ঘোষণারা পরপরই কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আনন্দ মিছিল বের করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ড। জেলা শহরের খড়মপট্টি এলাকার কার্যালয় থেকে জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহর নেতৃত্বে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা ঘোষিত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে দণ্ড কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। ডেপুটি কমান্ডার আবদুল মান্নানসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। মিছিল শেষে স্থানীয় জনগণের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের হাতে নিহতের স্বজনরা ফাঁসির রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান। নিহত আবদুল হামিদের ছেলে ও মামলার সাক্ষী দুলাল মিয়া বলেন, ‘রায়ের ফলে দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট দূর হয়েছে। আমরা এখন রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছি। রায় কার্যকর হলে আমার বৃদ্ধা মা শান্তি পাবে।’
নিহত পরেশের বন্ধু ও মামলার সাক্ষী আবদুর রশীদ ভুইয়া বলেন, ‘আমার বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ দাহ করতে নিষেধ করা হয়। অন্যথায় গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আজ সেই অপরাধের বিচার হলো।’
নিহত মিয়া হোসেনের আত্মীয় ও মামলার সাক্ষী মো. ইকবাল হোসেন আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকাররা এখানে হত্যাসহ নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছিল। আমরা বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর বিচার হওয়ায় আজ আমাদের আনন্দের দিন।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের করিমগঞ্জ উপজেলা ইউনিট কমান্ডার মেহেদি উল আলম বলেন, এই রায় প্রত্যাশিত ছিল। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ আনন্দিত। এখন দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় আদালতে। এর মধ্যে রয়েছে একাত্তরের ২৭ অক্টোবর করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামে আটজনকে গুলি করে হত্যা, ২৩ আগস্ট উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে একজনকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা, ২৫ অগাস্ট পূর্ব নবাইদ কালীপুর গ্রামের এক নারীসহ দুজনকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা, ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামে এক সংখ্যালঘুকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা, ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গলে একজনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ১৩ নভেম্বর আয়লা গ্রামের একজনকে অপহরণ ও হত্যা।