পানামা পেপারসে অর্ধশত বাংলাদেশি

পানামা পেপারসে অন্তর্ভুক্ত হাজারো অফশোর প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। আইনি হুমকি সত্ত্বেও প্রায়ই অনলাইনে তথ্যভাণ্ডারে প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিআইজে। অনলাইনে প্রকাশিত পানামা পেপারসে তথ্যভাণ্ডারে দুই লাখ প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের ২০টি কর ফাঁকি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে (গ্রিনিচ মান সময় ১৮টা) অফশোরলিকস ডট আইসিআইজে ডটঅর্গ(offshoreleaks.icij.org) এই ওয়েবসাইটে পানামা পেপারস সম্পর্কিত অফশোর অ্যাকাউন্ট ও ব্যক্তির তথ্যভাণ্ডার উন্মুক্ত করা হয়।
পানাম পেপারস তথ্যভাণ্ডারে দেশের নামের স্থলে বাংলাদেশ দিয়ে অনুসন্ধানে দুটি অফশোর প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের ৫৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পাওয়া যায় তিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। এ ছাড়া বাংলাদেশের ৪২টি ঠিকানা উল্লেখ আছে তথ্যভাণ্ডারে।
পানামা পেপারসের অনলাইনে পাওয়া বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট দুটি অফশোর প্রতিষ্ঠান হলো সওয়েন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (প্রতিষ্ঠা ২৫ জানুয়ারি, ২০০৭) এবং সেভেন সি অ্যাসেট লিমিটেড (প্রতিষ্ঠা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১১)। দুটি প্রতিষ্ঠানই করা হয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডে। পেপারসের অনলাইনে ‘অফিসার্স’ ক্যাটাগরিতে থাকা বাংলাদেশিরা হলেন- কফিল এইচ এস মুইদ, ইউসুফ রাইহান রেজা, ইশরাক আহমেদ, মিসেস নভেরা চৌধুরী, ফরহাদ গনী মোহাম্মদ, মেহবুব চৌধুরী, বিলকিস ফাতিমা জেসমিন, মো. আবুল বাশার, জাইন ওমর, বেনজির আহমেদ, আফজালুর রহমান, মুল্লিক সুধীর, সরকার জীবন কুমার, নিজাম এম সেলিম, মোহাম্মদ, মোকসেদুল ইসলাম, মোতাজ্জারুল ইসলাম, মোতাজ্জারুল ইসলাম, এম সেলিমুজ্জামান, আফজালুর রহমান, সৈয়দ সিরাজুল হক, এফ এম জুবাইদুল হক, জাফরুল্লাহ কাজী, মোহাম্মদ আমিনুল হক, নাজিম একরামুল হক, ক্যাপ্টেন এম এ জাউল, কাজী রাইহান জাফর, মোহাম্মদ শাহেদ মাসুদ, সালমা হক, খাজা শাহাদাত উল্লাহ, সৈয়দা, সামিনা মির্জা, দিলিপ কুমার মোদী, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, মোহাম্মদ শাহেদ মাসুদ, জাফরুল্লাহ কাজী এবং জাফরুল্লাহ নিলুফার, জুলফিকার হায়দার, উম্মে রুবানা, আজমত মঈন, মির্জা এম ইয়াহিয়া, মিস্টার নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, জাফের উম্মেদ খান, নিলুফার জাফরুল্লাহ, এ এম জুবায়দুল হক এবং সালমা হক, আসমা মঈন, এ এফ এম রহমতুল বারী, এ এস এম মুহিউদ্দিন মোনেম, খাজা শাহাদাত উল্লাহ, মাহতাবুদ্দিন চৌধুরী, জাফরুল্লাহ নিলুফার। এ ছাড়া কয়েকজন বিদেশির নাম পাওয়া গেছে যাদের বাংলাদেশি বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন- পেসিনা স্টেফানো, রুডি বেঞ্জামিন, রজার বার্ব।
মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমেডিয়ারিস) হিসেবে তিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- স্টেফান পার্কার, দিলীপ কুমার মোদি ও বিবিটিএল। এ ছাড়া অনলাইন তথ্যভাণ্ডারে ঠিকানার তালিকা দেখুন এই ঠিকানায়
বিবিসি জানায়, অফশোর কোনো প্রতিষ্ঠান করা অবৈধ নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অফশোর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো দেশের কর ফাঁকি দেওয়া হয়। আর পানামা পেপারসে থাকা সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত নয়। তাই বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তির ও প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় দেওয়া হয়েছে তাঁরা সবাই কর ফাঁকি দিয়েছেন এবং অর্থ পাচার করেছেন তা বলা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হলেই সঠিক তথ্য জানা যাবে।
এর আগে প্রকাশিত পানামা পেপারস প্রতিবেদনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পরিবার, ফিফার এথিকস কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
আইসিআইজে জানায়, তাদের কাছে এক কোটি ১৫ লাখ নথিতে চার দশকের তথ্য-উপাত্ত আছে। এসব নথি ছিল মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কাছে।
আইসিআইজে জানিয়েছে, মোসাক ফনসেকা বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে গোপন কোম্পানি গঠনের ব্যাপারে সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে পরিচালিত নিরীক্ষায় (অডিট) দেখা গেছে, মোসাক ফনসেকা ১৪ হাজার ৮৬ কোম্পানির মধ্যে ২০৪টির প্রকৃত মালিকের পরিচয় জানত। পানামা পেপারসে প্রথম ধাপ প্রকাশের পরপরই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের তথ্যভাণ্ডার হ্যাক হওয়ার কথা জানিয়েছে। আর গত সপ্তাহে মোসাক ফনসেকা তথ্য অনলাইনে প্রকাশ বন্ধ রাখায় আইনি পথে এগিয়েছে। তবে এর পরও আইসিআইজে তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করেছে। গত মাসেই প্রথম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদমাধ্যমে পানামা পেপারস শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।