নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত শিক্ষক চিকিৎসার জন্য ঢাকায়

ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ এনে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরে ওঠ-বস করে লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দুপুর ১টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান শফিউল আলম জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শফিউল আলম আরো জানান, প্রধান শিক্ষক যে আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তা এখন তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে কিছু প্রভাব এখনো আছে। ওনার ডায়াবেটিস ও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সমস্যা ছিল। যেহেতু গত দুদিন ধরে মাথাব্যথার সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে, তাই উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
পুলিশি প্রহরায় প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মেডিসিন বিভাগের একটি ওয়ার্ডে শ্যামল কান্তিকে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ১৩ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুলমাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁরা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠ-বসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এর পর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত সোমবার শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল বুধবার হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আগামী তিনদিনের মধ্যে জানাতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর ভিত্তিতে কমিটি তাঁকে স্বপদে বহালের সুপারিশ করেছে। তদন্ত কমিটি স্কুলের আগের কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে।