প্রধান শিক্ষকের ফাঁসির দাবি ‘মুসলিম জনতা’র, আলটিমেটাম

লাঞ্ছনার শিকার প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার জুমার পর ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেখে হেফাজত ইসলামের জেলা আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল এ দাবি জানান। এ সময় তিনি শিক্ষকের বিচার শুরুর জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সরকারকে। দাবি আদায় না হলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকিও দেন এই হেফাজত নেতা।
জুমার পর নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি এলাকায় এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে অন্য নেতারা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অপসারণ দাবি করেন।
জুমার নামাজের পর পরই শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা সমাবেশে আসতে থাকেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে কয়েক হাজার মুসল্লি অংশ নেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তাহরিকে নবুয়তের নেতা ড. সাঈদ আব্বাসী, জেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির, মাওলানা হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
সমাবেশে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারী শিক্ষার্থী রিফাতও বক্তব্য দেয়। সে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচার দাবি করে।
হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জের জেলা আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল সমাবেশে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং শিক্ষার্থী রিফাতের সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলেছে, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তাই আমরা এ ব্যাপারে আর বসে থাকতে পারি না।’
গত ১৩ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুলমাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠ-বসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এর পর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত সোমবার শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত বুধবার হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আগামী তিনদিনের মধ্যে জানাতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর ভিত্তিতে কমিটি তাঁকে স্বপদে বহালের সুপারিশ করেছে। তদন্ত কমিটি স্কুলের আগের কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে।