সবাই মিলে বিভাজনকে দাফন করব

সবাই মিলে বিভাজনকে দাফন করতে আইনজীবীদের আহ্বান জানিয়েছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল এ কথা বলেন।
বিচারাঙ্গনে যে বিভক্তি ছিল, তা দূর করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আসুন, বিভাজনকে আমরা সবাই মিলে কবর দিই, দাফন করি। একদিন বিভাজনকে কবর দিতে সবাই ফাতেহা পড়ি। আমাদের বহু দলীয় গণতান্ত্রিক সংবিধানকে মেনে নিতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন সম্ভব নয়, যদি আইন প্রয়োগ নিরপেক্ষভাবে করা না যায়।’
সংবিধানে নীতির ঐক্যের অঙ্গীকার আছে উল্লেখ করে বয়োজ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘সবাই ঐক্যের কথা বলছে। আর এটি হলো নীতির ঐক্য, যেটা আমাদের সংবিধানে লেখা আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা সংবিধানে অঙ্গীকার করা হয়েছে। সামনে ৪ নভেম্বর (১৯৭২ সালের এ দিনে গণপরিষদে খসড়া সংবিধান অনুমোদন হয়) আছে। এদিন আমরা জাদুঘরে গিয়ে দেখতে পারি, সংবিধানে কী লেখা আছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব, আপনারা সে রকম একটি উদ্যোগ নেবেন।’
একই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নির্বাচিত হলে দলীয় বিভাজন দূর করব। আমরা সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী বলেন, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহস আইনজীবীদের থাকতে হবে। আইনজীবীদের মধ্যে যে বিভক্তি, তা এখন বিচারপতিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রেই অবক্ষয় ঘটেছে। আইনজীবীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা অনেকে বিচারক নিয়োগের সময় তদবির করি। এটাই বাস্তবতা। এরপরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সময়ে যেসব বিচারক নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বিচারে নির্মোহ আছে।’
হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সামনে রেখে আমরা আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, সব রাজনীতিবিদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরোধী। এ ব্যাপারে তাঁরা দল-মত নির্বিশেষে একমত। পার্থক্য সরকারে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আবার বিরোধী দলে গেলে স্বাধীনতার কথা বলেন। বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করতে পারবে না।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আইনজীবীদের নেতা শামসুল হক চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শামসুল হক স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রমুখ।