সুগন্ধায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুমারখালী এলাকায় সুগন্ধা নদীর একাংশ (চর পড়া মৃত নদী) দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। তাঁদের দখল করা ১২০ একর জলাশয়ে এরই মধ্যে বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা মাছ চাষের।
স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, অবৈধ এ কাজকে বৈধ করার জন্য আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নদীতে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রভাবশালী অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী। রুনু চৌধুরী ‘অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতি’ নামে একটি নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে মাছ চাষের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
এর আগে গত ১৩ মে দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বাঁধ নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে দখলদার অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ও তাঁর ছেলেরা বাঁধ নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষের ফলে মৃত ওই নদী ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ এলাকার ৩০০ জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, জলাশয় ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্থানীয় কৃষকরা।
কুমারখালী এলাকার জেলে জব্বার সিকদার বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন চলে যাওয়ার পরপরই রুনু চৌধুরী ও তাঁর ছেলেরা লোকজন নিয়ে বাঁধটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করেন। নদীতে বাঁধ দিয়ে তাঁরা প্রথমে মাছ শিকার করেছেন। অন্য জেলেদের নদীতে নামতে দিচ্ছেন না। নদীতে নামলেই মারধর করবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। বাঁধ দেওয়ায় এখানকার প্রায় ৩০০ মৎস্যজীবী পরিবার না খেয়ে মরবে। শিল্পমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে তাঁরা মাছের পোনা অবমুক্ত করতে যাচ্ছে। এতে অবৈধ কাজের বৈধতা পেয়ে যাবে দখলকারীরা।
জেলে জব্বার খান বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় আমাদের রুজি-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে, অন্যদিকে একজন লাভবান হবেন। ৩০০ জেলের সর্বনাশ করে একজনের উপকার করা অন্যায়। আমাদের জলাশয় উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক, যাতে আমরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারি।’
অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘আমাদের কাছে কাগজপত্র রয়েছে। আমরা এখানে বাঁধ দিয়ে চিংড়ির খামার করব। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাই অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতির উদ্যোগে শিল্পমন্ত্রী প্রধান অতিথি থেকে ৬ জুন (আজ) মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন।’
নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, স্থানীয় অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে সেখানে মাছের পোনা ছাড়বেন বলে শুনেছি। এটা মৎস্য বিভাগের কোনো অনুষ্ঠান নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে কুমারখালী এলাকায় সুগন্ধা নদীর বুক চিরে চর জেগে ওঠে। এতে ১২০ একরজুড়ে নদীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই অংশ পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করে। তবে সুগন্ধা নদীর সঙ্গে সংযোগের কারণে জোয়ার-ভাটার পানি সচল থাকায় নদীর মৃত অংশে মাছ শিকার করে স্থানীয় ৩০০ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে ওই নদী থেকেই পানি সরবরাহ করেন। এ অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় প্রভাবশালী অলিউর রহমান রুনু চৌধুরী, তাঁর ছেলে আসিফ চৌধুরী ও রাজীব চৌধুরী ভাড়াটে লোকজন দিয়ে কুমারখালী মরা নদী দখল করেন। ওই দিন থেকেই তাঁরা সুগন্ধা নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশের স্থানটিতে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। ১ জুন বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় জেলে ও কৃষকরা।
এ বিষয়ে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং যারা বাঁধ নির্মাণ করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। শুনেছি এর পরও কাজ বন্ধ করা হয়নি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’