‘আমাদের মারবেন না, আমরা ডাকাত নই’

ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় বেঁচে যাওয়া ছাত্র আল-আমিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আদালতের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
আল-আমিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা ডাকাত নই, আমরা ছাত্র, এটা বলার পরও আসামিরা আমাদের ছাড়েনি। অতর্কিতভাবে আমাদের মারধর করেছে।’
আজ সোমবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলামের আদালতে ভিকটিম আল-আমিন এ সাক্ষ্য দেন।
আল-আমিন সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে শবে বরাতের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাই। বৃষ্টি নামলে আমরা সবাই একটি ছাউনির নিচে আশ্রয় নিই। ছাউনির নিচে যাওয়ার পর ওখানকার এলাকার লোকজন আমাদের অতর্কিতভাবে মারধর করে। রাতের অন্ধকারে কাউকে দেখি নাই। বাঁচার আকুতি করলেও তাঁরা আমাদের মারধর করা বন্ধ করে নাই।’
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শাকিলা জিয়াসমিন মিতু এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন।
প্রসিকিউটর জানান, ভিকটিম পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা-ই আজকে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেছেন। জেরা শেষে বিচারক আগামী ৩০ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। এ নিয়ে এ মামলায় ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতরা হলেন—ধানমণ্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান।
নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
ওই ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক।
ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ অভিযোগপত্রের পরে মামলাটি বিচারের জন্য এই আদালতে এলে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতি দেওয়া হয়।
হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ছয়জন পলাতক, একজন কারাগারে, ৫২ জন জামিনে ও এক আসামি মারা যান। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।