শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ে নদীভাঙা মানুষের কান্নার রোল

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন এলাকা। পদ্মার পারে চলছে মানুষের কান্না আর আহাজারি। অব্যহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ।
জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচেই আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। এদিকে এই মুহুর্তে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
বুধবার বিকাল ও বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নদীর পাড়ে থাকা গাছপালা কেটে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই বসতঘর ও আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়,চোখের সামনেই ২’শ বছরের পুরানো বাপ দাদার ভিটা হারিয়ে যেতে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খালাশিকান্দি গ্রামের রিতা বেগমদের(৪৫) দালান ঘরটি ভেঙে পড়ে। চোখের সামনে নিজের বসতঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিতা বেগম। ঘর হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রিতা বেগম বলেন,‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। এনজিও থেকে ঋণ এনে ধারদেনা করে ঘর বানিয়েছিলাম। কিস্তির টাকা এখনও বাকি। বাকি কিস্তি কিভাবে শোধ করবো?’
এনটিভির প্রতিবেদককে রিতা বেগম জানান, এক বছর আগে এনজিওর কাছ থেকে ঋন নিয়ে ও ধার দেনা করে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচে ঘরটি নির্মান করেছিলেন রিতা বেগম। স্বামী বিল্লাল ফকির পেশায় একজন কৃষক। এখনো ঋনের ২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি তাঁদের। এরই মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এ পরিণতি কেবল রিতা বেগমদেরই নয়, একই পরিনতি কুন্ডেরচর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের অসংখ্য মানুষের।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা জানায়,পদ্মার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোতের কারণে পদ্মায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে কুন্ডেরচর ইউনিয়নে ব্যপক ভাঙ্গন শুরু হয়। নদী ভাঙ্গনে ইউনিয়নটির ৪টি গ্রামের ৮’শ ৫০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে ইউনিয়নের হাসেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, একটি পাকা মসজিদ, সরকারি পাকা সড়কসহ পাঁচ শতাধিক বসত বাড়ি।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তহবিল থেকে ৬৭৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নতুন নতুন ভাঙন এলাকাগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন,অস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিয়ে ভাঙ্গন রোধ করা যাবে না। স্থায়ী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প তৈরি করে চাহিদাপত্র পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।