‘ধর্ষণের’ পর হত্যা, ২ মাসেও আসেনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর শহরের দরিদ্র কিশোরী শারমিন আক্তার (১৩)। প্রায় দুই মাস আগে তাকে ‘ধর্ষণের’ পর আঘাত করে হত্যা করে প্রভাবশালী পরিবারের বখাটে যুবকরা। এমন অভিযোগ মেয়েটির পরিবারের।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের কথা বলে মৃত্যুর পর পুলিশ শুধু একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও আসেনি, পুলিশও কোনো মামলা নেয়নি। এমনকি কোনো তদন্তও করেনি বলে মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করেছে।
পুলিশের সাফ জবাব, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়।
নিহত শারমিনের পরিবারের অভিযোগ, অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পলাশ থানা পুলিশ ঘটনা ভিন্ন দিকে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। গরিব হওয়ায় হত্যার দুই মাস পার হলেও মামলার কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করছে না পুলিশ। তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে একটি মহল আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়ে ধামাচাপা দিতে চাইছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে ঘোড়াশাল ভূঁইয়ার ঘাট এলাকা থেকে শারমিন আক্তার নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরের দিন ভোর ৫টায় বাড়ির পাশের একটি সুপারি গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখতে পায় এলাকাবাসী। এ সময় তার পা মাটির সঙ্গে লেগে ছিল বলে দাবি পরিবারের। খবর পেয়ে পলাশ থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত কিশোরীর মা রুকসানা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা দুই মাস আগে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে। সেখান থেকে ভোরে অসুস্থ অবস্থায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে আজ পর্যন্ত আমি মামলা করতে পারিনি। হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেও তা পারিনি।’
রুকসানা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের গলায়, দুই পায়ে ও কোমরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমার প্রশ্ন, এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে এত সময় কেন?
আপনারাই বলেন। আমি শুধু চাই, আমার মেয়ের কী হয়েছিল, তা জানতে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে একটাই চাওয়া, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এনে আমার মেয়ের খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করা হোক।’
কিশোরীর মা আরো জানান, এলাকার কয়েকজন বখাটে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে। তারা এখন তাঁর বাড়িতে ককটেল মেরে হুমকি দিচ্ছে। তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্ত বখাটেদের নাম জানতে চাইলে রুকসানা বেগম ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ ব্যাপারে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য মামলার কার্যক্রম অপেক্ষমাণ আছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গত সপ্তাহেও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
ওসি আরো জানান, ভিকটিমের বাড়িতে কে বা কারা ককটেল বোমা মেরেছে, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামীম আহমেদ জানান, তাঁরা কিশোরী শারমিনের ময়নাতদন্ত করেছেন। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকার মহাখালীতে রাসায়নিক পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে প্রতিবেদন এলেই দ্রুত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের মাধ্যমে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।