জঙ্গি আরিফের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুতি সম্পন্ন

সবকিছু ঠিক থাকলে ঝালকাঠির দুই বিচারককে হত্যার দায়ে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের ফাঁসি রায় আজ রাতেই খুলনা জেলা কারাগারে কার্যকর হচ্ছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আরিফের সঙ্গে দেখা করেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাঁদের হত্যার করা হয়। সেই হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসাদুল।
আসাদুলের বাড়ি বরগুনা জেলা সদরে। আসাদুল ২০০৮ সাল থেকে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন। খুলনা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফাঁসির দণ্ড কার্যকরকে কেন্দ্র করে কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফকে কারাগারের ৩ নম্বর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। দুপুর ১টা দিকে খুলনা জেলার সিভিল সার্জন এস এম আব্দুর রাজ্জাক আরিফের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
এর পর দুপুর ২টার দিকে স্ত্রী, তাঁর দুই কন্যা, ছয় বোনসহ মোট ১২ জন আরিফের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যান। ঘণ্টাখানেক পর তারা করাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
পরে বিকেল ৫টার দিকে আরিফের স্ত্রী তাঁর দুই কন্যাকে নিয়ে আবারো স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যান।
সাক্ষাৎ শেষে আরিফের ভাইপো মো. জামাল জানান, আরিফের মনোবল শক্ত রয়েছে। তিনি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, তাঁকে যেন অপরিচিত কোনো স্থানে দাফন করা হয়। সে কারণে আরিফকে নিজ এলাকায় দাফন না করে তাঁর শ্বশুরবাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর গ্রামে দাফন করা হবে।
মো. জামাল আরো জানান, সাত বোনের একমাত্র ভাই আরিফ।
এ দিকে বিকেল সাড়ে ৩টার জেল সুপার মো. কামরুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা হয়নি।
খুলনা জেলা কারাগারে প্রায় এক যুগ পর কোনো ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় বোমা হামলাকারী ইফতেখার হোসেন মামুন, জেলা জজ আদালতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মান্নান ও দুধ বিক্রেতা বাদশা মিয়া আহত হন।
২০০৬ সালের ২৯ মে এ হত্যা মামলার রায়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ সাতজনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন। এরই মধ্যে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুকের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শীর্ষ এ ছয় জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।
অপরদিকে একই মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জেএমবি নেতা আরিফ ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর তিনি আপিল করেন। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।