পঞ্চগড়ে সুদখোর মহাজনদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নে সুদখোর মহাজনদের শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। চাকলাহাট এলাকাবাসীর ব্যানারে পঞ্চগড়-চাকলাহাট সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ওই এলাকার কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে সন্ধ্যায় টুনিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
চাকলাহাট ইউনিয়নের ভাণ্ডারুগ্রাম ও কেকুপাড়া এলাকার সুরুজ্জামাল, ফোজো, তাহেরুল ও ছয়ফুল নামের সুদখোর মহাজনদের প্ররোচণায় গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে কীটনাশক পান করেন দরিদ্র ভ্যানচালক আবদুল খালেক। পরের দিন বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
আবদুল খালেক চাকলাহাট ইউনিয়নের কেকুপাড়া এলাকার বৃদ্ধ হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
সুদখোর মহাজনদের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় আবদুল খালেক আত্মহত্যা করেছেন অভিযোগ করে আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় থানায় মামলা করেন স্ত্রী মহিদা বেগম। এতে সুদখোর মহাজন মো. সুরুজ্জামাল (৪০), মো. ফোজু (৪০), মো. তাহেরুল (২৭) ও মো. ছয়ফুলকে (২৫) আসামি করা হয়েছে।
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়েরের কথা নিশ্চিত করে পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম মমিন জানান, ৩২৩ ও ৩০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওসি আরো জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে ভ্যানচালক আবদুল খালেকের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, অভাবী সংসারের প্রয়োজনে আবদুল খালেক সুরুজ্জামালের কাছে দুই হাজার ও ছয়ফুলের কাছে পাঁচ হাজার টাকা সুদের ওপর ধার নিয়েছিলেন। টাকা দিতে না পারায় সুরুজ্জামাল, ফোজু, তাহেরুল ও ছয়ফুল মঙ্গলবার খালেকের ব্যাটারিচালিত ভ্যান আটক করে। এ সময় তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে সুরুজ্জামাল ভ্যানটি আটক করে ৩৫ হাজার টাকায় তাহেরুলের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ টাকা সুদখোর মহাজনরা ভাগাভাগি করে নিয়ে আবদুল খালেকের হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার পরামর্শ দেয়। এ সময় সুদখোররা আবদুল খালেককে অপমান-অপদস্ত করে এবং লাঞ্ছিত করে। খালেক বাড়িতে ফিরে বিষয়টি স্ত্রী মহিদা বেগমসহ পরিবারের লোকজনদের জানান এবং রাতে কীটনাশক পান করেন।
বিষয়টি টের পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই খালেককে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল খালেক মারা যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার মাস আগে আবদুল খালেক আশা ও আরডিআরএস এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫২ হাজার টাকায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কেনেন।
সুদখোর মহাজনদের অপমান ও লাঞ্ছনার ঘটনায় আবদুল খালেক ‘আত্মহত্যা’ করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আজ বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
মানববন্ধনে আবদুল খালেকের বাবা হাফিজউদ্দিন, মা খতেজা বেগম, স্ত্রী মহিদা খাতুন, ভাই বুধারু মোহাম্মদ, বোন ফরিদা, জাফর আলী, ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম, মোজাহার আলী মাস্টার, সাবেক ইউপি সদস্য সপিজুল ইসলাম, কলেজছাত্র রুবেলসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন। তাঁরা সুদখোর মহাজনদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়ে সুদখোর মহাজনদের বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক রয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানায়।