সরকার গণতান্ত্রিক নয় : সন্তু লারমা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেছেন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেন, এই সরকার গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক সরকার নয়।
আজ বুধবার দুপুরে বান্দরবানে স্থানীয় রাজার মাঠে জেএসএস সমর্থিত ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ২০তম জেলা সম্মেলন ও ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন জেএসএস সভাপতি।
পাহাড়ে শন্তিচুক্তির স্বাক্ষরকারী এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় বর্তমান সরকার গণমুখী, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক সরকার নয়। আমাদের দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাঁরা নিজেদের গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক সরকার বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবে তারা আজও সেটি প্রতিফলন করতে পারেনি।’
সন্তু লারমা প্রশ্ন তোলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ১৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারে না। শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ এখনো নির্যাতিত। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ চায় মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে, তাঁরা পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানেও পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণের জন্য কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি রাখা হয় নাই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, আদিবাসীদের নিজস্ব কোনো পরিচিতি নেই। তাঁরা উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হতে পারে।
‘বাংলাদেশে বাংলা ভাষাভাষি মানুষের যদি সুনির্দিষ্ট পরিচয় থাকতে পারে, তাহলে অবাঙালি অন্য ভাষাভাষিদের কেন সুনির্দিষ্ট পরিচয় থাকবে না। পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণে আজ নির্যাতিত,’ বলেন সন্তু লারমা ।
বান্দরবান জেলা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জ্যোতিস্মান চাকমার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কে এস মং মারমা, চট্টগ্রামের নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহীন, জেলা বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলন কমিটির সভাপতি জুমলিয়ান আমলাই, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াইচিং প্রু মারমা, জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা উদয়ন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়সহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে পিসিপি সম্মেলনকে ঘিরে জেলার সাত উপজেলা ছাড়াও রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলা থেকেও জেএসএস নেতাকর্মীরা গাড়িতে করে সমবেত হন। খণ্ড খণ্ড মিছিলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বান্দরবানে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বিজিবি, সেনাবাহিনী টহলের পাশাপাশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্তু লারমা গত মঙ্গলবার দুপুরে পিসিপি দুদিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিতে সড়কপথে বান্দরবান আসেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার ফারুকপাড়ায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে সন্তু লারমার আগমনের প্রতিবাদে বান্দরবানে শত শত কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে ‘জাগো পার্বত্যবাসী’সহ কয়েকটি বাঙালি সংগঠন।