জাজিরায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে তাণ্ডব

শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাশপুরের ইয়াসিন মাদবর কান্দিতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরিত বোমায় নিহত অনিকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় জাজিরা থানা পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেছে।
অন্যদিকে অনিকের মৃত্যুর পর তাঁর পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মেছের আলী মাস্টার ও বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ওরফে বোমা কুদ্দুসের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সংঘর্ষের জন্য বোমা বানাতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিলাশপুরের ইয়াসিন মাদবরকান্দিতে হাতবোমার বিস্ফোরণে অনিক মাদবর (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অনিকের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।
আজ বুধবার সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় জাজিরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বোরহান উদ্দিন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেছেন।
এদিকে অনিকের মৃত্যুর পর মেছের আলী মাস্টারের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ বোমা কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক আলীমুদ্দিন মাদবরকান্দির গফুর বেপারীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসতঘরে ভাঙচুর করেছে এবং তিনটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া দাইমদ্দিন খলিফাকান্দির হারুন খলিফার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভাঙচুর, রানা সরদারের বাড়ি ভাঙচুর, মাস্টার আবদুল খালেক দেওয়ানের বাড়িতে লুটপাট, দিল মোহাম্মদ সরদারের বাড়িতে ভাঙচুর ও দুটি গরু লুট, নুরুল ইসলাম মালের বাড়িতে হামলা করে চারটি গরু লুট, চান মিয়া মালের বাড়িতে ভাঙচুর, শওকত মালের বাড়িতে হামলা ও দুটি গরু লুট, সুরতখার কান্দির আবদুর রব ভূঁইয়ার বাড়িতে লুটপাট, সেকেন্দার ভূঁইয়ার একটি, দুলাল মিয়ার দুটি, আজিজ ভূঁইয়ার দুটি, চুন্নু মাদবরের দুটি, বাদল সরদারের একটি, দেলোয়ার চৌকিদারের একটি গরু লুট এবং আকনকান্দির আবু তাহের বেপারির বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বোমা কুদ্দুসের সমর্থক হারুন খলিফা বলেন, ‘অনিক মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা যারা কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে মেছের আলী মাস্টারের সমর্থকরা। হামলাকারীরা আমাদের গবাদিপশুগুলো নিয়ে গেছে। প্রাণের ভয়ে আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মেছের মাস্টারের ছেলে ও নিহত অনিকের চাচাতো ভাই আব্দুস সালেক মাদবর বলেন, ‘আমাদের কোনো লোক প্রতিপক্ষের কোনো বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর বা লুটপাট করেনি। অনিককে বোমা মেরে হত্যা করার অভিযোগে অনিকের বাবা মনির মাদবর বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ এজাহার গ্রহণ করেনি।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়ে অনিক মারা যায়। তাঁর সাথে আরো দুজন আহত হয়। তিন ভিকটিমকেই আসামি করে এসআই মো. বোরহান উদ্দিন একটি মামলা করেছেন। মঙ্গলবারের ঘটনার পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোনো ভাঙচুর বা লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।