মন্ত্রী, সাংসদসহ প্রভাবশালীদের ডিও লেটারের চাপে চবি ভিসি

মন্ত্রী, সাংসদসহ প্রভাবশালীদের ডিও লেটারের চাপে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গত দেড় বছরে একজন কর্মচারীও নিয়োগ দেওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তাঁর টেবিলে পড়ে আছে হাজার হাজার ডিও লেটার। মোবাইলের মেসেজ ভরে গেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নানা অনুরোধ। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুই তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান। তবে সাম্প্রতিক নানা ঘটনার কারণে আর কয়দিন তিনি উপাচার্য পদে থাকতে পারবেন এ নিয়েও শঙ্কিত।
আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাবেক উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ আলমের নাগরিক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক নগদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েছেন অভিযোগ করে উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, অনেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট’ বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, এ দলে সচিবরা আছেন ভুয়া, অনেক বড় বড় কর্মকর্তারাও ভুয়া। তবে মুক্তিযুদ্ধ করে সাটিফিকেট নেননি এমন মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যাও আছে অনেক। এ সময় মঞ্চে বসা চবির সাবেক ডিন ড. গাজী সালাউদ্দিনকে দেখিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না সন্দেহের কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অনেক বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতার পোষ্যদের তদবিরে অতিষ্ঠ উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, বড় নেতাদের নাতিপুতিরা ৬ ও ৮-এর বেশি নম্বর পায়নি। কীভাবে তাদের ভর্তি করাব?
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ড. গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করা ভালো না। বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই। মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের রক্ত গেছে। আমি কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এখন অবসরে গেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি এমন প্রমাণ করতে একজন সাবেক ভিসি চেষ্টার ত্রুটি করেনি। কিন্তু সফল হননি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলে এক বছর ছুটি পেয়েছি। সার্টিফিকেট গলায় লাগিয়ে বলার দরকার নেই আমি মুক্তিযোদ্ধা। রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না।’
প্রবীণ অধ্যাপক গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার সঙ্গে শিক্ষকের নাম জড়িয়ে গেছে। এটা শিক্ষক হিসেব অত্যন্ত লজ্জার। ই-টেন্ডার না হওয়ায় টেন্ডার নিয়ে ছাত্র খুন হচ্ছে। এটা কখনো কাম্য হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে ড. রওশন আরা ইউসুফ, ড. শাহ আলম, চবি রেজিস্ট্রার ড. কামরুল হুদা, ড. জিন বোধি ভিক্ষু, ড. জসিম উদ্দিন, ড. মাহামুদ হাসান, মফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ ইদ্রিস বক্তব্য দেন।
এর আগে সকালে হাটহাজারী উপজেলার ধলইয়ের ফেদাইত চৌধুরী মাদ্রাসা মাঠে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ড. আবু ইউসুফ আলম মেধা বৃত্তি ও পদক তুলে দেওয়া হয়।
মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ড. আবু ইউসুফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আরিচ আহমেদ শাহর পরিচালনায় বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাঈনুদ্দিন, রেজিস্ট্রার ড. কামরুল হুদা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ, ড. রওশন আরা ইউসুফ, সিসিএলের পরিচালক শ্যামল পালিত কাঞ্চন, ধলই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর জামান, ড. আবু ইউসুফ আলম ফাউন্ডেশনের পরিচালক ওমর ফারুক লুলু, অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ, কামরুল হাসান শাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এস এম নোমান, সদস্য আলী আকবর, উত্তর জেলা কৃষক লীগের প্রচার সম্পাদক হামিদ হাসান, উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি শাহাজান মাহাবুব, ব্যাংকার হোসাইনুল কবির চৌধুরী, মাওলানা ইউসুফ, গাজী জাহেদ হোসেন ও তওহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
ড. আবু ইউসুফকে অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও সাহসী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও দক্ষ প্রশাসক বলে উল্লেখ করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক মাঈনুদ্দিন। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরণ করতে শিক্ষার্থী ও আগামী প্রজন্মকে আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকায় শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শিক্ষক, পরে সফল উপাচার্য হয়েছেন।
রেজিস্ট্রার ড. কামরুল হুদা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করতে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনার অন্যতম কারিগর ছিলেন ড. আবু ইউসুফ স্যার।