খুলনায় বিজয় এসেছিল একদিন পর

আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর গোটা বাংলাদেশ মুক্তবাহিনীর দখলে এলেও বিজয় দিবসের পরের দিনও খুলনা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যশোর থেকে পালিয়ে খুলনায় পাকিস্তানিরা শক্ত ব্যুহ রচনা করে রেখেছিল। তার আগে খুলনার শিরোমণিতে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ ট্যাংকযুদ্ধ হয়েছিল। সে যুদ্ধের কাহিনী আজো বিভিন্ন দেশে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণকালে পড়ানো হয়।
মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী তাঁর বইতে লিখেছেন, যুদ্ধবিশারদদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর খুলনার শিরোমণিতে এমন ধরনের ট্যাংকযুদ্ধ, গোলন্দাজ যুদ্ধ, হাতাহাতি ও বেয়নেট যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। নগরীর বাতামতলা এলাকায় শিরোমণি যুদ্ধের একটি নামফলক ছিল, তবে কয়েক বছর আগ থেকে ভেঙে পড়ে আছে।
খুলনা অঞ্চলের মিত্রবাহিনীর প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল দলবীর সিং এবং ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। তাঁরা ১৬ ডিসেম্বর রাতে যখন সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন মিত্রবাহিনীর দপ্তরে বসে, এ সময় মিত্রবাহিনীর নবম সেক্টরের স্টাফ অফিসার কর্নেল পান্ডে এসে জেনারেল দলবীর সিংকে খবর দেন, পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান ও তার সাত কর্নেল আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে এসেছেন।
এ সময় খুলনা নিউজপ্রিন্ট ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সদর দপ্তর। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে। তারপর পাকিস্তানি বাহিনী নিউজপ্রিন্ট ছেড়ে সার্কিট হাউস ময়দানে যাত্রা করে এবং ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান তাঁর ব্রিগেড মেজর ফিরোজকে নির্দেশ দেন, ‘সবাইকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও, যুদ্ধ শেষ।’
এই সময় সার্কিট হাউস ময়দানে প্রথম বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধা রহমতউল্লা দাদু আর খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে পতাকা উত্তোলন করেন স ম বাবর আলী ।
এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নারী-পুরুষ ‘জয় বাংলা’, ‘স্বাধীনতা এনেছে, বঙ্গবন্ধুকে আনব’ স্লোগান দিয়ে খুলনার আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।