সেন্ট্রাল হাসপাতালকাণ্ডে গ্রেপ্তার চিকিৎসকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মুক্তির দাবিতে এবার মাঠে নেমেছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। আজ রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংগঠনটির সদস্য চিকিৎসকরা। সেখান থেকে ওই দুই চিকিৎসকের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
বক্তারা সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলিকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ এবং ডা. মুনা ও শাহজাদীকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে গ্রেপ্তার চিকিৎসকদের মুক্তি দাবি করেন।
ওজিএসবির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, ‘প্রসব বেদনায় কাতর জটিল রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের ডাক্তাররা আজ জেলে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই।’
সংগঠনটির সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. সালমা রৌফ বলেন, ‘কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়, কিন্তু জটিলতা এড়ানো যায় না। পৃথিবীর কোথাও জটিলতার জন্য ফৌজদারি মামলা হয় না। বিনা বিচারে গ্রেপ্তার চিকিৎসকদের জামিন না হওয়া দুষ্টু লোকদের সুযোগ করে দেওয়ার শামিল। তাই চিকিৎসকদের জামিন ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক।’
ডা. সালমা রৌফ আরও বলেন, ‘জটিল রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি চিকিৎসকরা হামলা-মামলার শিকার হয়, তাহলে চিকিৎসকরা আর জটিল রোগীর চিকিৎসা করতে সাহস পাবে না। এতে রোগী মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমাকে রাত দুটা-তিনটার দিকে কল দিলে আমি ভাবব, রোগীর গায়ে হাত দেব কি না। আজকে ইমারজেন্সি সেবা তাহলে বন্ধ হয়ে যাবে। ইমারজেন্সি সেবা দিতে যদি চিকিৎসকরা নিরুৎসাহিত হন, তাহলে আমাদের রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা জনগণকে জিম্মি করতে চাই না।’
অধ্যাপক ডা, সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি মনে করি, চিকিৎসকদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসা উচিত। এবং আমাদের সবার দাবি, যেন ভর্বিষতে হঠাৎ করে ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকা হয়। যাদের ধরা হয়েছে, তাদের যেন অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।’
প্রসঙ্গত, সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার (গাইনি) অধীনে গত ৯ জুন ভর্তি হয়েছিলেন মাহাবুবা রহমান আঁখি। কিন্তু, সে দিন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালেই ছিলেন না। পরে তার দুই সহযোগী চিকিৎসক আঁখির ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করেন। তবে, জটিলতা দেখা দেওয়ায় নবজাতককে এনআইসিইউতে রাখা হয়। একই সঙ্গে আঁখির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ১০ জুন বিকেলে আঁখির নবজাতক সন্তান মারা যায়। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমণ্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগে একটি মামলা করেন।
মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখি।