গণমাধ্যম বিরোধীদের তৎপরতায় ২০৫ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ
মুক্ত গণমাধ্যম বিরোধীদের তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২০৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই উদ্বেগের কথা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি মহল বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময় ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী মতের গণমাধ্যম বন্ধের দাবি তুলেছে এবং গণমাধ্যম বন্ধে সরকারের পদক্ষেপে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এই গোষ্ঠীটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়নমূলক পদক্ষেপে বরাবরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন জুগিয়েছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে তাদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য-বিবৃতি প্রকারান্তরে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে রক্ষারই আয়োজন এবং এই তৎপরতা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে অন্তরায়।’
বিবৃতিদাতারা হলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক রায়হান রাইন এবং অধ্যাপক মানস চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দীন, শিল্পী অরূপ রাহী, দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, নারী অধিকারকর্মী দিলশানা পারুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, শিল্পী মুস্তাফা জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম, চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, লেখক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, লেখক জিয়া হাশান, লেখক আবু সাঈদ আহমেদ, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ, লেখক ও অনুবাদক লুনা রুশদী, গবেষক ও অধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ দু’দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ছলে-বলে-কৌশলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। বল প্রয়োগ করে সভা-সমাবেশে সংগঠিত অধিকার এবং সকল উপায়ে মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিহত করে চলেছে। গুলি, লাঠিচার্জ, আক্রমণ, আঘাত, গুম, খুন, গ্রেপ্তার, গণগ্রেপ্তার, মামলা, গায়েবি মামলার মাধ্যমে পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।’
সরকারের একরোখা মনোভাবের কারণে দুটি প্রতারণামূলক নির্বাচনের পর আরো একটি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও লজ্জাজনক হলেও এই পরিস্থিতিতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনতে পেরেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ভিসানীতি প্রণয়নের পর সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের পরিসর বিস্ময়করভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।’
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তির সমর্থনে টিকে থাকা এই সরকারের দমনমূলক নীতি প্রশমিত করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নীতি ও পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মানবাধিকার ও মতপ্রকাশ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের চলমান আন্দোলনে বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ, দেশ ও সংগঠনের সমর্থন খুবই প্রত্যাশিত ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা মনে করি।’
দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল দলের জন্য প্রয়োজনীয় সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরি হয়নি দাবি করে এতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই শুধু সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশসসহ নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এমন একটি নিরপেক্ষ সরকারই নিতে পারে।’
বিবৃতিদাতারা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমেও সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরি করা দরকার বলে মনে করেন।