৬৯ মামলায় বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/12/14/adatat.jpg)
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৬৯ মামলায় বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজার ২৬ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাও রয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিন শতাধিক আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এসব মামলার বেশির ভাগে বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা-হামলা, যানবাহন ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সাজা হয়েছে ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত। যদিও রায়ের দিন মামলার বেশির ভাগ আসামিই কারাগারে উপস্থিত ছিলেন না।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র ও আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ অক্টোবর বিএনপিনেতা রবিউলসহ ১০ জনকে প্রথম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর একে একে ৬৯ মামলায় সাজা ঘোষণা করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতের বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গত দেড় মাসে এই রায় দিয়েছেন। মামলাগুলো বেশির ভাগ ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দায়ের করা করা এবং সাজা প্রাপ্তদের তালিকায় যেমন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।
এ পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবীবুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনামুল হক, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর।
এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া, রাজীব আহসান ও হাবিবুর রশীদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।
সাজাপ্রাপ্তদের আরও আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপি নেতা আহসান হাবিব হীরা, আবদুল্লাহ জামান আদিত্য চৌধুরী, আলমগীর হোসেন আজাদ, গিয়াস উদ্দিন মানিক, বদরুল আলম সবুজ, সোহাগ ভূঁইয়া, মোহাম্মদ ভাসানী চাকলাদার, মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ঢাকা সিটির সাবেক কাউন্সিলর মো. আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ, তেজগাঁও থানা সেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, রাজ, সেলিম, কবির, শফিজুর রহমান শাফিজ. যুবদল নেতা জালাল, শ্রমিক দলনেতা শাহ আলম, আব্দুল জলিল, ইউসুফ হোসেন মিন্টু, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু ও ছাত্রদল নেতা ঝন্টু।
এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেসব তরুণ রাজনৈতিক নেতা ভবিষ্যতে এমপি হবেন, তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। যে কারণে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় রায় দেওয়া হচ্ছে। এসব রায়ে গুম খুন হওয়া ব্যক্তিকে ও সাজা দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রাণলয়ের প্রত্যক্ষ নিদের্শে কয়েকজন বিচারক এসব রায় দিচ্ছেন। এতে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মানুষ দেশের মানুষ শঙ্কিত। এসব বিচার করার সময়ে অনেকের সাক্ষী নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ক্রিমিনাল ট্রায়ালে নামে পলিটিকাল ট্রায়াল মঞ্চস্থ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করছে। পুলিশ সাক্ষীসহ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হচ্ছে, আদালত তাদের কারাদণ্ড দিচ্ছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে না, আদালত তাদের খালাস দিচ্ছেন। রায়ে সংক্ষুব্ধ যেকোনো ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।’
জানা যায়, গত ২ নভেম্বর হরতালে পুলিশের গাড়িতে পেট্রলবোমার অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতের ১০ জনকে কারাদণ্ড দেন দেওয়া হয়। ৭ নভেম্বর রাজাধানীর বংশাল থানায় ৯ জন, ৮ নভেম্বর মিরপুর থানার তিন মামলায় ২২ জন, ১৪ নভেম্বর বনানী থানার ১০ জন, ১৫ নভেম্বর মিরপুর থানার মামলায় ছয়জন, ১৬ নভেম্বর ভাসানটেক মামলার তিনজন, ২০ নভেম্বর পল্টন থানার মামলায় ২৫ জন, বংশাল থানার মামলা ৬২, ২২ নভেম্বর পল্টন থানার মামলা ৯ জন ও উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ জন, ২৩ নভেম্বর থানার লালবাগ থানা মামলা ৫০ জন, কোতায়ালী থানার ১২ জন ও উত্তরা পশ্চিম থানার ৭৫ জনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অপরদিকে, ২৭ নভেম্বর উত্তরখান থানার থানার ১৭ জন,২৮ নভেম্বর বংশাল থানার ১৬ জন, কাফরুল থানার একজন ও দক্ষিণখান থানার ৩৮ জন এবং ২৯ নভেম্বর উত্তরাপূর্ব থানার ২২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদিকে ডিসেম্বর মাসে ৩ ডিসেম্বর ভাটারা থানার ১১ জন, ৪ ডিসেম্বর সবুজবাগ থানার ১৫ জন, রামপুরা থানার ১৪ জনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরদকে, ৬ নভেম্বর ভাসানটেক থানার মামলা ২৬ জন ও কোতায়ালী থানার ১২ জন, ৭ ডিসেম্বর গুলশান থানার মামলা আটজন ও শাহাজাহানপুর থানার ২০ জন, ১০ ডিসেম্বর কোতয়ালী থানার আটজন, কলাবাগান, বংশালের ৬৫ জন, গুলশান থানার ১১১ জন, পল্টন থানার ২০ জন, ১২ ডিসেম্বর ভাটারা থানার মামলায় ৪ জন, ১৩ ডিসেম্বর বনানী, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীচর থানার তিন মামলায় ১০৯ জন ও ধানমণ্ডি ও কাফরুল থানার ১৮ জন ও আজ বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও, বনানী ও শাহাজাহানপুর থানার পৃথক তিন নাশকতার মামলায় ৪৭ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।