বংশাল থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/01/31/mohanogor-daira-adalot_0.jpg)
পুলিশ হেফাজতে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাইনুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে করা মামলা ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এই আদেশ দেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) আদালতে মামলাটি করেন নিহত যুবক ফারুকের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী। ওদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। পরে মামলাটি আজ আদেশের জন্য রাখেন। এরপরে আজ বিকেলে বিচারক মামলাটি ডিবি পুলিশকে তদন্ত করে আগামী ২৮ মার্চ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
পিপি আরও বলেন, মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—বংশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।
মামলার আরজি থেকে জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর লালবাগের খাজা দেওয়ান সিং লেনের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন ফারুক হোসেন। এক ঘণ্টা পর তার স্ত্রী হ্যাপীকে ফোন দিয়ে জানান, তাকে সন্দেহজনকভাবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ আটকে রেখে নির্যাতন করছে। এই খবর পেয়ে দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে হ্যাপী সেখানে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, ফারুককে পুলিশ সদস্যরা মারধর করে আটকে রেখেছে।
আরজিতে আরও বলা হয়, হ্যাপী সেখানে উপস্থিত এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ফারুক অনেক বড় ক্রিমিনাল। তাদের গালিগালাজ করেছে। এমনিতে ছাড়া যাবে না। ওকে ছাড়তে হলে এক লাখ টাকা লাগবে। তখন হ্যাপী জানান, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডি বিল্ডার ছিলেন, মিস্টার বাংলাদেশ হয়েছিলেন। তিনটি ছোট সন্তান, ফারুকের ইনকামেই সংসার চলে। তাকে ছেড়ে দিন। পরে এক লাখ থেকে কমিয়ে পুলিশ সদস্যরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এ ছাড়া হ্যাপীকে অশালীন প্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে আরও মারধর করে। আসামিরা দাবি করে, ফারুক মাদক ব্যবসায়ী। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের বড় স্যার জানেন কী করবেন। এর কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটরসাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।
আরজিতে আরও বলা হয়, হ্যাপী তখন মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে আকুতি মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। তাকে পরদিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন হ্যাপী কোর্টে যান স্বামীর খবর নিতে। সেখানে স্বামীর সাক্ষাৎ পান। মারধরের কথা স্ত্রীকে জানান ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলেন। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাঁজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। এদিন বিকেলের দিকে তিনি বাসায় ফিরে যান।
১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপীকে জানান, ফারুক মারা গেছেন। হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর মরদেহ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।