জামালপুরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/07/17/jamalpur_pic.jpg)
জামালপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, ট্রেনে হামলা ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে হামলার ঘটনায় ট্রেনচালক ও শিশুসহ অন্তত ১০ যাত্রী এবং ছাত্রলীগের হামলায় ১০ থেকে ১২ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
আজ বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরের মির্জা আজম চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর বাড়তে থাকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মির্জা আজম চত্বরে জড়ো হতে থাকে। বিক্ষুব্ধরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ও ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা এবং মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা জামালপুরের সঙ্গে মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
এ ছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা আদায় করে শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের শেখেরভিটা রেলক্রসিংয়ে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং রেলপথ অবরোধ করে। এর কিছু সময় পর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেন থামানোর জন্য মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। এতে ট্রেন চালক আবুল কালাম (৬৪) ও সহকারী ট্রেনচালক ইদ্রিস আলী (৪১), ট্রেনের যাত্রী মো. আলম (৩০), তার মেয়ে আশামনি (৫), ছেলে শাহিনসহ (৪) অন্তত ১০ ট্রেনযাত্রী পাথরের আঘাতে আহত হন। আধাঘণ্টা ট্রেনটি আটকে রাখার পর অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের দিকে অগ্রসর হয়। কলেজের ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তন্ময়ের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ নেতাকর্মী মিছিলে হামলা করে। হামলায় আলমগীর (২২), জান্নাত (১৯), জিয়াসহ (১৯) ১০ থেকে ১২ আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রছাত্রী আহত হন। এ সময় অনেকেই পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে কলেজের বাইরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ায় আন্দোলনকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে ছাত্রলীগনেতারা বাইরে বেরিয়ে আসেন। কলেজ ত্যাগ করে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের পাঁচরাস্তা হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে গেইটপাড় এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা প্রধান সড়ক এবং জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর-সরিষাবাড়ী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে ও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে বন্ধ থাকে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল। গেইটপাড় এলাকায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর বিকেলে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে তাদের কর্মসূচির সমাপ্ত ঘোষণা করে।