গাজীপুরে কারখানায় অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর : শ্রমিকনেতাসহ গ্রেপ্তার ৪
বেক্সিমকোর শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় গাজীপুরে গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কাশিমপুর থানায় মামলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) গ্রামীণ ফেব্রিক্সের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. তরিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় শ্রমিক নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের আশুলিয়া থানার সভাপতি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার মোসলেবাদ গ্রামের মো. খোরশেদ আলম (৩৮), বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ও গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার মাধবপুর গ্রামের মো. রাশেদুল কবির রাসেল মন্ডল (৪৮), ঢাকার আশুলিয়া থানার সুবন্দী গ্রামের মো. রিয়াজ উদ্দিন কালু (৪৪) ও ঢাকা মহানগর শাহআলী থানা এলাকার মো. গাউসুল মোস্তফা রাজু (৩৮)।
কাশিমপুর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বুধবার (২২ জানুয়ারি) চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর, একটি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। একপর্যায়ে রাতে তারা স্থানীয় গ্রামীণ ফেব্রিক এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. তরিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বৃহস্পতিবার একটি মামলা করেন। এ মামলার এজহারভুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কোথাও কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। মহানগরের জিরানি বাজার, চক্রবর্তী ও সারাব এলাকার গ্রামীণ ফেব্রিকস কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা ছাড়া আশপাশের প্রায় সকল কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ গ্রামীণ ফেব্রিকস কারখানাটি বৃহস্পতিবারে জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে।
গ্রামীণ ফেব্রিকস কারখানার নিরাপত্তা কর্মী মো. ওবায়দুল সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সন্ধ্যায় বেক্সিমকোর শ্রমিকরা কারখানার গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে নিচতলায় থাকা সম্পূর্ণ মালামাল পুড়ে যায়। এ কারণে কারখানাটি আজ (বৃহস্পতিবার) ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানায় শুধু ইলেকট্রিশিয়ান ও পরিষ্কার কাজে নিয়োজিতদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বুধবার গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ১৬ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর এবং একটি ট্রাক, তিনটি বাস ও গ্রামীণ ফেব্রিক এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে। এসময় পুলিশ নিবৃত্ত করতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করেন। ওই কারখানাগুলোর মালিক সালমান এফ রহমান। গত কয়েক মাস ধরে এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা বেশ কয়েক দফা আন্দোলনে নেমে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে সরকার ঋণ দিয়ে শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করে।
এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধ করা হয়। এরপর থেকে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধসহ বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে শ্রমিকরা বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ ও ব্যাংকিং সুবিধাসহ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সানসিটি মাঠে গণসমাবেশ করে বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়।