এবার ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে সাগর নামে এক হকারকে হত্যার ঘটনায় ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন সাগরের মা বিউটি আক্তার। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ রুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক নৌ পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ ২৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রসহ বলপ্রয়োগ করে আঘাতের মাধ্যমে সাধারন ও গুরুত্বর জখমসহ খুন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান ওই মামলায় ৫৫ নম্বর আসামি। তবে এই মামলায় এখনো মতিউরকে গ্রেপ্তার দেখায়নি পুলিশ। এমনকি গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে আদালতে আবেদনও করেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপপরিদর্শক এসআই মনিরুল ইসলাম।
গত ১৪ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। লায়লা কানিজকে কারাগারে পাঠানো হলেও মতিউর রহমানকে ভাটারা থানার অস্ত্র মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি ও ১২ জানুয়ারি তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। দুই দফায় মতিউর ও তার পরিবারের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন ঢাকার আদালত।
গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুর্নীতি মামলায় মতিউর রহমানকে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে তোলা হয়। পরে মতিউর রহমানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি দেন আদালত।
এ বিষয়ে মতিউর রহমানের আইনজীবী মো. ওয়াহিদুজ্জামান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হত্যা মামলার বিষয়টি তাদের গোচরে আসেনি। এ মামলাটিও আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন হকার মো. সাগর। ওই দিন বিকেল ৪টায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
গত কোরবানি ঈদে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। তার বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই জেরে আলোচনায় আসেন ইফাতের বাবা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তখন এনটিভির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান ইফাতকে নিজের ছেলে হিসেবে অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই যুবক টাউট।’
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে ক্রমেই ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও।