কারাগারে বসেই ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন দরবেশ : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা নিজে ও পরিবারের লোকজনের সমন্বয়ে দেশে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এখন শেখ হাসিনা পাশের দেশ থেকে কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছেন। আর যে কয়জন ধরা পড়ে জেলখানায় আছেন তাদের মধ্যে একজন দরবেশ (সালমান এফ রহমান) তিনি কারাগার থেকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন। তিনি মাঝেমধ্যে জেলখানা থেকে ঝাড়ফুঁক পাঠাচ্ছেন যে এতগুলো শ্রমিক নেমে গেলেই তো হয়।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) এর সেমিনার হলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রকৌশলীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (এ্যাব)।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমি জানি না তাদের বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে চলছে। কীভাবে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এই কথাগুলো বলছে। নিশ্চয়ই তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তারা সেটির সুযোগ নিয়ে কথাবার্তা বলছে।
কারাগারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমাদেরকে কারাগারে নিয়ে মাদকসেবী ও ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে রাখা হতো। আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে গুম খুন করা হয়েছে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বলছে ভালো। কিন্তু সংস্কারের নামে আপনারা সময় ক্ষেপণ করবেন না। এমন সংস্কার আনুন যাতে ফ্যাসিবাদ পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। এমন সংস্কার নিয়ে আসুন যাতে মানুষ ন্যায়বিচার পায়। এমন সংস্কার আনুন যাতে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা হয়। আর যাতে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়। তা না হলে মানুষ ভালোভাবে নেবে না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমান বহুমুখী প্রতিষ্ঠান। স্বল্প পরিসরে তাকে নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিরাট বিস্তৃত। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পেরেছিলেন। তার গুণাবলী ছিলো অপরিসীম।
এ্যাবের সভাপতি ও আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী এ কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী আব্দুল হালিম মিয়া, সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), আইইবি ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুব আলম, এ্যাব নেতা প্রকৌশলী আবদুস সালাম, প্রকৌশলী গোলাম মাওলা, প্রকৌশলী এ কে এম জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, প্রকৌশলী রুহুল আলম, প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন ও প্রকৌশলী শামীম রাব্বি সঞ্চয়।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন দ্বিধান্বিত। সে সময় তিনি কি করবেন কি করবেন না এমন সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশের মানুষ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। কিন্তু পলাতক প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ তার বইয়ে লিখে গেছেন যে, জিয়াউর রহমান ও তার অবদান মুছে ফেলতে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন পলাতক প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির এই বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রতি আওয়ামী লীগের আচরণ মানুষ দেখেছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল ও পাল্টা কোন্দলে ১৫ আগস্ট ঘটেছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান একটি রাষ্ট্র দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন। যার বিশালতা অনেক।
রিজভী আরও বলেন, কি পররাষ্ট্রনীতি, কি শিক্ষানীতি কিংবা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সকল খাতে জিয়াউর রহমানের অবদান। তিনি যুদ্ধোত্তর একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৃতিত্ব তো জিয়াউর রহমানের। জোর করে আয়নাঘর বানিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করে ইতিহাস লিখেছেন। কিন্তু মানুষ সেটি গ্রহণ করেনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য করা হতো যে, শেখ মুজিব দেবতাতুল্য! গত ১৫/১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনা এটি করার চেষ্টা করেছেন। জবরদস্তি করে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করেছেন। পটুয়াখালী যেতে পর পর তিনটি সেতুর নাম তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাখা হয়েছে। দেশে কি আর কোনো খ্যাতিমান লোক নেই। এটা কি কোনো দেশ ছিলো? এটি ছিল শেখ হাসিনার গোষ্ঠীতন্ত্র।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনি (হাসিনা) ভাসানীর নামে নভোথিয়েটার নাম বদলে বাপের নামে রেখেছেন। অথচ তার পিতা ছিলো ভাসানীর শিষ্য। তিনি বেঁচে থাকলেও তো এটি করতেন না?
রিজভী আরও বলেন, ছাত্রিশিবির তাদের একটি লেখার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক করেছে। এটি কেনো? মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না। আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। সেটাকে ছোটো করে, কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না। আমরা সকল চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ করে সকলে শান্তিতে থাকতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে তার হাতের স্পর্শ লাগে নাই? তিনি দেশের কৃষি, গার্মেন্ট শিল্প, জনশক্তি রপ্তানি থেকে শুরু করে বহুমুখী উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশকে আত্মনির্ভরশীল ও উন্নতির দিকে নিয়ে যান। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভা কিন্তু প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ততা ছিল অনেক। আজকে দুর্ভাগ্যজনক যে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রকৌশলীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি নেই। আমি আশা করছি বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বঞ্চিত প্রকৌশলীদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। আমরা সকলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে দেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
আলমগীর হাছিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়েছে। চরম মাত্রায় দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৌশলীদের বলব- ভুল এবং লুটপাটের প্রকল্পের দিকে যাতে আমরা সম্পৃক্ত না হই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি কিছুই হবে না।
প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম বলেন, একাত্তরে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা তখন কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা ছিল না। একজন সাধারণ মেজর মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে লড়াই করেছেন। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেন। তিনি দেশে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। মধ্যপ্রাচ্যে তিনি জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি উৎপাদনের পরিকল্পনা করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনে দিয়েছিলেন। তিনি দেশে বিদেশে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে একক কারও অবদান নেই। সে আন্দোলনে ছাত্রজনতা ও পেশাজীবীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল।