বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত বুধবার
এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি)। দুপুর ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমার মুরব্বিদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান।
ইজতেমা ময়দানে জিএমপির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী হয়ে চলাচলকারী সব সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহণ চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে। অন্যান্য বারের মতো আখেরি মোনাজাতের আগের রাত থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে না। দুই ধাপে শুরায়ে নেজামির (জুবায়ের পন্থি) তাবলিগ অনুসারীদের প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষ হওয়ার পর আট দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ পন্থিদের তিন দিনের ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা।
আজ মঙ্গলবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। বুধবাবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।
ইজতেমায় জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় দিন মুসল্লিদের উদ্দেশে বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশিদ। তার বয়ানের তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকারিয়া। পরে তালিমের মোজাকারা করেন ভারতের মাওলানা জামাল। এরপর খিত্তায় খিত্তায় তালিম অনুষ্ঠিত হয়। তা চলে জোহরের পূর্ব পর্যন্ত। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদারা। বাদ আছর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান। বয়ান শেষে তিনি যৌতুক বিহীন বিয়ে পড়ান। দিনের শেষে বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তাঁর বয়ানের তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের।
সম্পূর্ণ শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় দিন বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসে। এ আসরে ২৩টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এসব বিয়ে পড়ান। কনের সম্মতিতে ও তাঁর অনুপস্থিতিতে বর ও কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় এই বিয়ে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমান ধরা হয় দেড়শ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য। বিয়ের পর নব-দম্পতির সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মোনাজাত করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। প্রথম পর্বের দুইধাপে মোট ৮৬টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান।
ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশ গ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইল মসজিদের তাবলিগি মুরব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠানো হবে।
মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এ পর্বের প্রথম ধাপে মোট এক হাজার ৪৬৫টি জামাত গঠন হয়। এর মধ্যে দেশি জামাত একহাজার ২৭১টি, বিদেশি জামাতের সংখ্যা ৯৭টি।
৯ মুসল্লীর মৃত্যু
শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে এসে তাবলিগ জামাতের আরও এক মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর নাম আমির হোসেন (৬৫)। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুরে। আজ বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার গভীর রাতে ৩১ নম্বর খিত্তায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে প্রথম পর্বের দুই ধাপের বিশ্ব ইজতেমায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল নয়জনে। তারা সবাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।
এর আগে যে আট মুসল্লি মারা গেছেন তারা হলেন, নরসিংদীর মাধবদীর রংপুর গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার মসজিদপাড় গ্রামের চান মিয়ার ছেলে ওয়াহিদ (৫০), ভোলার চরফ্যাশনের হাজি আব্দুল গফুর (৭৫), হবিগঞ্জ জেলা সদরের রমিজ উদ্দিন (৫৫), একই জেলার বাহুবল থানার ইয়াকুব আলী (৬০), খুলনার ডুমুরিয়া থানার আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০), ঠাকুরগাঁও জেলার আমিরুল ইসলাম (৪৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার সাবেদ আলী (৭০)।
জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, আমি মুসল্লিদের বলব, আপনারা অনুগ্রহ করে মোনাজাতের সময় রাস্তায় বসবেন না। ইজতেমা মাঠে অনেক খালি জায়গা থাকে আপনারা একটু সময় নিয়ে মাঠে এসে মোনাজাতে অংশ নিলে রাস্তায় যানজট কম হবে। এ সময় তিনি এবারের ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজকদের সন্তুষ্টি প্রকাশের কথাও জানান।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জিএমপির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের সময় মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।