জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যত মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, গুলি চালিয়ে হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নসহ বিভিন্ন অপরাধে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫০টি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যা মামলা ২১৩টি এবং বাকি ৩৭টি মামলা হত্যাচেষ্টা ও অপরহণের অভিযোগে করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে গুম, খুন ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং রাজধানীর বিভিন্ন থানা সূত্রে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এসব মামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক সরকারি আমলা এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত সাড়া দেয়নি ভারত। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ অন্তত ৯০ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ৭২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ মামলাই আদালতে দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশের পর মামলাগুলো এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিররণী) হিসেবে থানায় নিবন্ধন করা হয়েছে। সিডিএমএসের বাইরেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং দেশের বিভিন্ন আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যেগুলোর তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
সিডিএমএসের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে। তার ছেলে ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ১৩, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ছয় এবং বোন শেখ রেহানার নামে পাঁচ মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার স্বজন শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিরুদ্ধে ছয়, শেখ ফজলে নূর তাপসের নামে এক, শেখ ফজলে শামস পরশের নামে তিন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নামে তিনটিসহ অন্যান্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা হওয়ার তথ্য রয়েছে।
সিডিএমএসে আসামির নাম, তার পিতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা, লিঙ্গ, ধর্ম, ঠিকানা, বয়স ও ব্যক্তির অপরাধের ধরন লেখা থাকে। এ ছাড়াও একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে তা-ও উল্লেখ থাকে। এ ছাড়াও সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিট সিডিএমএসে মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত করে। কোনো আসামির বিরুদ্ধে দেশের কোন থাকায় কোন অভিযোগে কোন ধারায় কী কী মামলা আছে, কোনো মামলায় সংশ্লিষ্ট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা সাজার রায় আছে কি না—এসব তথ্যও থাকে। মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ বিচার-সংক্রান্ত প্রায় সব ধরনের তথ্য সিডিএমএসে সংরক্ষণ করা হয়।
কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার সিডিএমএসের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সিডিএমএসে শেখ হাসিনার নামে মোট ৭২টি মামলার রেকর্ড রয়েছে। সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটে থাকা মামলা, এজাহার ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সব ধরনের তথ্য সিডিএমএসে সংরক্ষণ করা হয়। এর ফলে যেকোনো অপরাধীর তথ্য খুব দ্রুতই খুঁজে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, যখন যার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখন সে তথ্য সিডিএমএসে যুক্ত করা হয়। ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে মামলাগুলো রয়েছে, তার তথ্য সেখানে যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপির) কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) আসানুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর আসামির সব ধরনের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানার এসআই সিডিএমএসে যুক্ত করে থাকেন। এতে একজন অপরাধীর সব তথ্য নিমিষেই এক স্থানে পাওয়া যায়। অধিকাংশ মামলার তথ্যই এখানে যুক্ত করা হয়। প্রয়োজনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসি) মামলার তথ্য সংযুক্ত করে দেন। কোনো একজন অপরাধীকে আমরা ধরার পর সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিতে পারি, তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলার তথ্য সিডিএমএসে রয়েছে কিনা। কখনো কখনো সার্ভারের ত্রুটির কারণে নথি যুক্ত করতে অসুবিধা হয়। গত ডিসেম্বরে বেশ কয়েকদিন এ ধরনের সমস্যা হয়েছিল।’
সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিদিন ঢাকা মহানগরের থানাগুলোতে নতুন করে যত মামলা হয়, সেগুলোর এজাহারের ই-কপি ডাটাবেজে তুলতে হয়। ফৌজদারি মামলায় আসামির জামিন মঞ্জুরের তারিখ, যে আদালত জামিন মঞ্জুর করলেন সেই আদালতের নাম, যিনি জামিনদার হলেন তার নাম-ঠিকানা সিডিএমএসে সংরক্ষিত থাকে। জামিনের তথ্যের পাশাপাশি মামলায় যেসব আলামত জব্দ করা হয়, সেই তথ্যও সংরক্ষিত থাকে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয় গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায়। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। তবে সিডিএমএসে থাকা তথ্যের চেয়ে মামলার প্রকৃত সংখ্যা কিছুটা বেশি হতে পারে বলে জানান তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। ওইসব মামলার তথ্য সিডিএমএসে যুক্ত করা হয়নি। সিডিএমএসের তথ্য বলছে, বিগত পাঁচ মাসে হাসিনা পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ১০০ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর হুকুমদাতা, অর্থদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি ডিএমপির ভাটারা থানা থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়ার তথ্য সিডিএমএসে যুক্ত করা হয়।
সিডিএমএসে একজন ব্যক্তির নামে একটি কোডেই সব মামলার তথ থাকার নিয়ম। শেখ হাসিনার নামে প্রায় অর্ধশত কোড কেন, জানতে চাইলে ঢাকার একটি থানার ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভার সার্ভার স্লো অথবা অন্যান্য জটিলতা থাকে। আমরা সার্চ করে কোড খুঁজে পাই না। সময় কম থাকায় আমরা অনেক ক্ষেত্রে নতুন করে কোড তৈরি করি। বিভিন্ন থানা থেকে এভাবে নতুন করে দেওয়ায় অর্ধশত কোড হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মামলাগুলো একই কোডে আনার বিষয়ে কাজ চলছে।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবু সায়েদ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে প্রথম মামলা করা হয়। গত বছরের ১৩ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি এ মামলার আবেদন করেন। এরপরে বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল, সমাবেশ করেছে। তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। এতে বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। তখন রাস্তা পার হতে গিয়ে স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি এলাকায় প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী ও ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এস এম আমীর হামজা এ মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
মামলার অভিযোগে বাদী আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে পুলিশের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্থ পুলিশদের নির্দেশ দিয়ে মিছিলে গুলি চালানোর। পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কাজেই এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা
শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মো. রুমন নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা রেকর্ড হয়। মামলার বাদী রুমনের বোন রুমিয়া আক্তার।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে গত ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন রুমন। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে রুমনকে হত্যা করা হয়। গুলিটি লাগে তার বুকের বাঁ পাশে। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও আসামি করা হয়েছে।
গুলশানে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর গুলশান এলাকায় আবুজর শেখকে (২৪) গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় এ মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলার বাদী আবুজর শেখের মা ছবি খাতুন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় প্রগতি সরণির বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারা গুলি করেন। এ সময় আবুজর শেখ গুলিবিদ্ধ হন। এর ৯ দিনের মাথায় মারা যান তিনি।
কিশোরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় কিশোর সুলাইমানকে (১৬) গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর কদমতলী থানায় এ মামলা করেন সুলাইমানের মা রেখা বেগম। মামলায় বলা হয়েছে, শনির আখড়ায় গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগের লোকজন গুলি চালান। এতে সুলাইমান গুলিবিদ্ধ হয়।
গাড়িচালককে গুলি করে হত্যাচেষ্টা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গাড়িচালক ইনছান আলীকে (২৬) গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেন ইনছান। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ আসামিরা মিছিলে গুলি ছোড়েন। এতে ইনছান গুলিবিদ্ধ হন।
ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর চানখাঁরপুলে ব্যবসায়ী সামছুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে গত বছরের ১৩ নভেম্বর। শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সামছুলের খালাতো ভাই লিটন মিয়া। মামলায় বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে চানখাঁরপুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করেন আসামিরা। তখন গুলিবিদ্ধ হন সামছুল। পরদিন তিনি মারা যান।
ভ্যানচালককে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর শাহবাগে পিকআপ ভ্যানচালক আবদুল্লাহ আল আবীরকে গুলি করে হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত বছরের ১৩ নভেম্বর শাহবাগ থানায় করা এ মামলার বাদী আবদুল্লাহর মামাতো ভাই ফিরোজ হোসেন। মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে শাহবাগের ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এ সময় যানজটে আটকা পড়েন আবদুল্লাহ। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্য আসামিরা গুলি ছুড়লে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন তিনি মারা যান।
রামপুরায় গুলি করে হত্যা
রাজধানীর রামপুরায় নাজমুল হাসান নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় মামলাটি করেন নাজমুলের বন্ধু মো. মজিবুল্লাহ।
তরুণকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর রায়েরবাগে মাহাদী হাসান (১৯) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৮ নভেম্বর মামলাটি কদমতলী থানায় রেকর্ড করা হয়।
বাড্ডায় মাদ্রাসাছাত্রকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর বাড্ডায় হাফেজ মাসুদুর রহমানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর বাড্ডা থানায় করা ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও আনিসুল হককেও আসামি করা হয়।
ভাটারায় যুবককে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর ভাটারা এলাকায় মনির হোসেন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর ভাটারা থানায় করা মামলায় হাসানুল হক ইনুকেও আসামি করা হয়।
মিরপুরে তরুণকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর মিরপুরে পারভেজ হোসেন (২১) নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে ৪ নভেম্বর।
মগবাজারে গুলি করে হত্যার চেষ্টা
রাজধানীর মগবাজারে সোহেল (১৮) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩৮ জনের বিরুদ্ধে গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে।
সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা
যাত্রাবাড়ীতে সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর মামলাটি যাত্রাবাড়ী থানায় রেকর্ড হয়েছে। মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ীতে খবর সংগ্রহের সময় গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যার দিকে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
হাতিরঝিলে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর হাতিরঝিলে মো. বাবু নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর মামলাটি হাতিরঝিল থানায় রেকর্ড করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে শেখ হাসিনা, তার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, র্যাবের সাবেক এডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, র্যাব-১১ এর সাবেক সিইও এবং নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার আসামি তারেক সাইদ মোহাম্মদসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ফয়েজ আহমদের ছেলে ডা. হাসানুল বান্না ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যা করে র্যাব। হত্যার পর তাকে বাসার ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। গভীর রাতে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ দাখিলের পর এক লিখিত বক্তব্যে হাসানুল বান্না জানান, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডা. ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসার ছাদে নিয়ে আঘাতের পর গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ডা. ফয়েজ আহমদ অত্যন্ত মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিত এবং লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন।
এ ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করেছেন জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিতে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর দুই ভাই, রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডে শহীদ হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হামলার ঘটনায় অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।