স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারে নাই : মেহেদী হাসান
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/10/avro.png)
এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে একুশে পদক পেতে যাচ্ছেন অভ্র কি-বোর্ড তৈরির কারিগর খ্যাত মেহেদী হাসান খান। তবে এ পদক তিনি এককভাবে গ্রহণ করতে রাজি হননি। তার চাওয়া অনুযায়ী সরকার এ ক্যাটাগরিতে মেহেদী হাসানের সঙ্গে অভ্র কি-বোর্ড তৈরিতে যুক্ত আরও তিনজনকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি অভ্র কি-বোর্ড তৈরির ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন।
গতকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে অভ্র কি–বোর্ডের ফেসবুক পেজে মেহেদী হাসান খানের দেওয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—
‘ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় একটু পরিচিতি পেয়ে যাওয়ার সুবিধা অসুবিধা দুইটাই আছে। বিড়ম্বনার কথা আজকে না বলি। সুবিধার একটা হলো প্রয়োজনে ডাকলে সঙ্গে থাকার মানুষ পাওয়া যায়। পরিচিতি পাওয়ার আগে এরকম সঙ্গে থাকার মানুষ পাওয়া কঠিন, কাজের মানুষ পাওয়া আরও কঠিন।
২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম, তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনত না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনও নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করল অনলাইন ফোরামে, তারা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি, অথবা বাগ (BUG) থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দেই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চিনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়া শুরু করল। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সঙ্গে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোনো কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই তাদের।
ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসঙ্গে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এরকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে, কিন্তু কোনো কারণে হাতেগোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের ওপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসঙ্গে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারে নাই।
আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। তাঁকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয় নাই, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। ২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করেছি—রিফাত, সিয়াম, শাবাব, এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না। তিনি (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। তাঁদের (সরকার) কথা ছিল—পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ, তাঁরা তাই করেছেন। আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সঙ্গে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশিদূর যাওয়া যায় না।
ভালো হলো শেষমেশ। তাঁরা (সরকার) বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো। পদক তো একটা প্রতীক বা উপলক্ষ, এই উপলক্ষে সবার একসঙ্গে হওয়া হবে আবার।‘