ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি
ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির।
আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউএনডিপিসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৮ দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে সময় কেমন লাগবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় দুটো নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। অতীতে আমরা দেখেছি, স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে এক বছর সময় লাগে। এতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। ইসি জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভাবছে। তবে সরকার যদি ওইভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, সেভাবে হবে। এক্ষেত্রে সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই হবে।’
একজন উপদেষ্টা আগে স্থানীয় নির্বাচন করার কথা বলেছেন, বিষয়টি নজরে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আবারও বলি, প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয়, সেখানেই যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এ বছরের শেষ নাগাদ, অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০২৫ এ নির্বাচন। আর যদি আকেটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ২০২৬ এর জুন নাগাদ নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা বলেছিলাম, আমাদেরকে নিকটতম তারিখ ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটি প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বড় আকারে পাঁচ স্তরের স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে একবছরের মতো সময় লাগে। আমাদের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়নি, কিছু হয়েছে। এ কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে স্পেসিফিক টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন কতটুকু হবে, কোন কোন ইনস্টিটিউশনের হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারব। তখন বলতে পারব এটা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি না, তার আগে সম্ভব না।’
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন সহযোগী ১৮ দেশের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, সঙ্গে ছিল জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি। এখানে প্রথমেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন নিয়ে আমরা কী করছি, তা তুলে ধরেছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ কোন স্টেজে আছি, সে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপি কী পরিকল্পনা করছে, সহায়তা দেওয়ার জন্য তা জানিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা কী ধরনের সহায়তা করতে পারেন, সে ধারণাও দিয়েছেন।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আগেও কথা হয়েছে। এটা ইসির হাতে নয়। প্রক্রিয়া ইতোমধ্য চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না, যা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে। তবে হ্যাঁ, কিছু বিষয় হয়তো থাকবে, আমরা তা নিয়ে ভাবছি না।’
এ সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া যায়, সেজন্য জানুয়ারিতে ইউএনের একটি প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন দল দুই সপ্তাহ সফর করে। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে ভোটারদের অশংগ্রহণের জন্য ইসিকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালীকরণ যেমন ভোটার নিবন্ধন, ভোটার নিবন্ধন প্রচার, ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
স্টিফেন লিলার আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আমাদের এ নিয়ে কিছু করার নেই।’
নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন লিলার বলেন, ‘এটা আমার মন্তব্য করার বিষয় নয়।’