ডিসিরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন : পরিবেশ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জেলা প্রশাসকরা নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এবার ডিসিরা নিরপেক্ষভাবে তাদের কাজ করতে পারবেন। কেউ রাজনৈতিকভাবে তাদের ওপর কোনো প্রভাব খাটাতে পারবে না। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে ডিসিদের কোনো অসুবিধা হবে না। কেননা এবারের নির্বাচন নির্দলীয় ব্যবস্থাপনায় হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জেলা প্রশাসকদের পাহাড়ের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। পাহাড়ের তালিকা পেয়েছি আমরা। পাহাড় কাটলে আগে শ্রমিকদের ধরা হতো, এখন থেকে মালিককে ধরা হবে। এগুলো দখলমুক্ত করতে কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বন দখলমুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আইন অনুযায়ী বন থাকে ডিসিদের নামে। বন উদ্ধারের বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, পাহাড়ের ঢালে সড়কের পাশে সংরক্ষিত বন ঘোষিত এলাকায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৫১ একরের আবাসন প্রকল্পটি বাতিলের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, বনাঞ্চল সংরক্ষণে মধুপুর শালবনের সীমানা চিহ্নিতকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও সংরক্ষিত বন এবং নদী ও জলাশয়ের রেকর্ড সংশোধনের বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা আরও বলেন, জেলাগুলোতে নদ-নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। এসব নির্ধারণ করে এদের আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হবে।
তিস্তা নিয়ে কোনো মহাপরিকল্পনা নেই উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, চীন একটা পরিকল্পনা দিয়েছিল। ২০২৬ এর পরিকল্পনার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তিস্তা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পরিকল্পনা সরকারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, বালু ও পাথর উত্তোলনের আগে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। দূষণবিরোধী অভিযানে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সহায়তা গ্রহণের ওপরও তিনি জোর দেন। তিনি দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণের আহ্বান জানান।
সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা আরও বলেন, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে, তাদের মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের কণা উপস্থিত থাকবে। সুতরাং প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাকার খাল সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে এ কথা উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, খাল দখল করে যারা কাঁচা-বাজার নির্মাণ করে জায়গা দখল করেছেন তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করবে।