১৭ বছর পর নিজ জেলা নেত্রকোনায় লুৎফুজ্জামান বাবর

দীর্ঘ ১৭ বছর পর নিজ জেলা নেত্রকোনার মাটির স্পর্শ পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। গতকাল রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জেলার ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
লুৎফুজ্জামান বাবর আসবেন শুনে নেত্রকোনার সর্বস্তরের মানুষ, দল-মত নির্বিশেষে ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে শনিবার রাত থেকেই জমায়েত হয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার জন্যে। অবশেষে রোববার বিকেলে ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে, লাখো মানুষের কণ্ঠে স্লোগানে স্লোগানে উচ্চারিত হয় ‘দুর্দিনের বাবর ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’।
লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আপনারা জানেন গত সাড়ে ১৭ বছর আমি মিথ্যা মামলায় কারাগারে ছিলাম। পুরো পৃথিবীতে এত দীর্ঘ দণ্ড কারো ছিলো না, যা আমাকে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের ভালোবাসা আর আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি আজ আপনাদের সামনে মুক্ত বাতাসে আসতে পেরেছি। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা স্বৈরাচারকে ও ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ। অতীতে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের, এদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে আমি কোনো কাজ করিনি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও এদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোন কাজ করব না।’
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একটাই লক্ষ্য ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা। আমার নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার আমার ওপর অনেক শক্তি প্রয়োগ করেছে, নির্যাতন করেছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে এবং আমার ঈমানি শক্তির জন্য আমি তা করিনি।’
লুৎফুজ্জামান বাবর আরও বলেন, ‘এখনও অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্যে প্রয়োজনে আমরা আবারও রাজপথে দাঁড়াব, আমাদের নেতা তারেক রহমান শিগগিরই আমাদের পাশে এসে উপস্থিত হবেন।’
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. আনোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য এডভোকেট আরিফা জেসমিন নাহীন, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান নুরু, জেলা বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক, যুগ্ম আহবায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদুসহ অন্যরা।
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৭ সালের ২৮ মে আটক হন লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর বিভিন্ন মামলায় তাঁর দণ্ড হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একটিতে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতন হওয়ার পর এসব মামলার আপিল শুনানি শেষে একে একে সব মামলা থেকে খালাস পান লুৎফুজ্জামান বাবর। এর মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে এবং ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস পান তিনি। ২১ আগস্টের মামলায়ও বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত