খুলনা রেঞ্জে শ্রেষ্ঠ হয়েও যশোরের এসপি প্রত্যাহার

পুলিশের কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী ও যশোরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) পৃথক পৃথক আদেশে প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) কাজী মো. ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত আদেশে জেলা পুলিশের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব ন্যস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে তাঁদের রিপোর্ট করতে বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে চার জেলার পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা জানা গেলেও যশোর জেলার এসপি জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের প্রত্যাহারের কারণ জানা যায়নি। অন্যদিকে বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
সূত্র বলছে, অজ্ঞাত কারণে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদকে প্রত্যাহারের কারণে খোদ পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খানও এই প্রত্যাহার আদেশে অবাক হয়েছেন। কেন এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা তিনি জানতে চান।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৭ বিসিএসের কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। বিশেষ করে বিগত সরকারের সময় ২৭তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের বেশিরভাগই এসপি পদে পদোন্নতি পেলেও জিয়াউদ্দিনকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়াউদ্দিনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। তিনি গুলশান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁকে এসপি পদে পদোন্নতি দিয়ে যশোর জেলায় বদলি করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, এ জেলায় জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ যথেষ্ট দক্ষতা ও সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পতিত আওয়ামী সরকারের সময় যশোর জেলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। সেখানে জিয়াউদ্দিন পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আর সেজন্য, সম্প্রতি পুলিশের খুলনা রেঞ্জ তাঁকে শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আলাপকালে আহ্বায়ক রাশেদ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, এসপির প্রত্যাহারের কারণটি রহস্যজনক। প্রত্যাহারের সপ্তাহখানিক আগেও তিনি খুলনা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যথাযথভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কেন জানি না, হঠাৎ তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। আমাদের কাছেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। তাঁকে কেন প্রত্যাহার করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা খুলনার উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল হকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সব মিলিয়ে হঠাৎ তাঁর এ প্রত্যাহারে আমরা অবাক হয়েছি।
দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়া জিয়াউদ্দিন আহম্মেদকে প্রত্যাহারের বিষয়ে পুলিশের মধ্যেও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
জিয়াউদ্দিন আহম্মেদকে প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, এ প্রত্যাহারের বিষয়ে আমি অবগত। অনেক প্রশাসনিক কারণ থাকতে পারে। যা সাধারণত ডিসক্লোজ করা হয় না।
এ বিষয়ে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি শুরুতে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দীর্ঘদিন পুলিশ বিভাগে পদোন্নতি বঞ্চিত থাকার পরও হঠাৎ এ প্রত্যাহারে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।