সুতো শিল্পে ঐতিহ্য বুনে চলছে তিন প্রজন্ম

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জগতি কলোনি পাড়ার আনোয়ার হোসেন। শৈশবেই তার বাবা আমেদ আলীর কাছ থেকে শিখেছিলেন সনাতন পদ্ধতিতে রশি তৈরির কাজ। বাবার কাছ থেকে শেখা এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন তিনি। আর শিখিয়েছেন তার সন্তানকেও। এখন বাবা ও দুই ছেলে মিলে তৈরি করছেন কটন সুতার দড়ি, যা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। এ দড়ি বাজারজাত করা হচ্ছে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদাসহ বেশ কিছু জেলায়। বাজারে এ দড়ির মূল্য কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা। মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার দড়ি বিক্রি করলেও লাভের অংশ খুবই কম বলে জানান আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেনের পরিবারের প্রতিটি দিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের সময়। চিনিকল সড়কের রেলবাজার সংলগ্ন জায়গায় সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে দড়ি তৈরির কাজ। আনোয়ার হোসেন নিজে দড়িতে পাক দেওয়ার কাজ করেন, বড় ছেলে সাইদুল ইসলাম সুতা বিছানোর দায়িত্বে আর ছোট ছেলে আরিফুল ইসলাম দুপাশ ধরে রাউন্ডে ঘুরিয়ে দড়ি প্রস্তুত করেন।
তিনজনের কঠোর পরিশ্রমে প্রতিদিন হাতে তৈরি হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি সুতার দড়ি। তবে প্রচণ্ড শ্রমের তুলনায় মুনাফা কম। তবুও তারা এই বংশ পরম্পরার শিল্প ধরে রেখেছেন।
সাইদুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। দাদা বাবাকে শিখিয়েছেন, বাবা আমাকে শিখিয়েছেন। ২০ বছর ধরে এই কাজ করছি, কিন্তু মুনাফা সীমিত। তবুও বংশের ঐতিহ্য রক্ষা করতে চাই।’
আরিফুল ইসলামও বাবার শেখানো পেশাকে খুব ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘পরাধীনতার শেকলে বাঁধা না থেকে আমরা নিজেদের পরিশ্রমেই পরিবার চালাচ্ছি। এতে আমাদের আত্মমর্যাদা থাকে, এটাই আনন্দের।’
মাত্র ১০ বছর বয়সেই বাবার হাত ধরে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন দুই ছেলের পিতা আনোয়ার হোসেন। এখনও সেই কাজকেই ভালোবাসেন তিনি। আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রঙের সুতা কিনে এনে তা ছাড়িয়ে ভাগ করে হাতে পাক দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় দড়ি। দিনভর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই চলে পরিবারের ১১ জনের জীবিকা।