একই পরিবারে ৭৯ জন কোরআনে হাফেজ!

নিজে পড়াশোনা করেছেন সাধারণ শিক্ষায়। তবে পবিত্র কোরআন শরীফের প্রতি ছিল সীমাহীন ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টান থেকে ছয় ছেলে ও চার মেয়েকে বানিয়েছেন কোরআনে হাফেজ। তাদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজ- হাফেজাদের (নারী হাফেজ) সঙ্গে। এমনকি নাতি-নাতনি ও নাতজামাইরাও হয়েছেন কোরআনে হাফেজ। তার পরিবারে এখন ৭৯ জন কোরআনে হাফেজ রয়েছেন। এলাকায় তারা হাফেজ পরিবার হিসেবে পরিচিত।
এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পটুয়াখালীর বাউফল সদর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদার (৯৫)।
স্থানীয়রা জানান, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মাদ হাওলাদারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে শাহজাহান হাওলাদার। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারায়। কয়েক মাস পরে শাহজাহান মা আমেন খাতুনও মারা যান। একমাত্র বড় ভাই মনির হাওলাদার তাকে লালনপালন করেন।
বাউফল সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাশ করেন শাহজাহান। ছোটবেলা থেকেই ধার্মিক ছিলেন তিনি। সারাজীবন তাবলিগ জামাত করেছেন। কোরআন শরীফ ও হাফেজদের অনেক ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকে লক্ষ্য স্থির করেন তার সন্তানদের কোরআনে হাফেজ বানাবেন। ছেলে-মেয়েদের হাফেজ ও হাফেজা বানিয়ে তাদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজা ও হাফেজদের সঙ্গে। তার নাতি-নাতনি ও নাতজামাইরাও হয়েছেন হাফেজ। তার পরিবারে এখন ৭৯ জন হাফেজ রয়েছেন। ছোটরাও হাফেজি পড়াশুনা করছেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান হাওলাদার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া বাবা-মায়ের সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের হাফেজ বানিয়েছেন। নির্মাণ করেছেন মসজিদ ও মাদ্রাসা। তার বড় ছেলে হাফেজ মাও. মজিবুর রহমান সৌদি প্রবাসী। অন্যরা সবাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাফিজি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, মসজিদে ইমামতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।
শাহজাহান হাওলাদারের ছয় ছেলের ৩২ সন্তান ও চার মেয়ের ২৭ সন্তানও কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের পরিবারে এখন হাফেজের সংখ্যা ৭৯ জন। একবছরে আগে ছিল ৬৩ জন। এ পরিবারে যারা ছোট রয়েছেন তারাও হাফিজি পড়াশুনা করছেন।
শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে হাফেজ জোবায়ের হোসেন বিলবিলাস গ্রামে তার মায়ের নামে ‘আমেনা খাতুন মহিলা মাদ্রাসা’ পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা ভাই বোনেরা হাফেজ হব। আল্লাহ আমাদের হাফেজ বানিয়েছেন। এমনকি আমাদের স্ত্রী সন্তান ও নাতি-নাতনিরাও হাফেজ হয়েছেন। আগামী যত প্রজন্ম আসবে তাদেরও হাফেজ বানানো হবে। এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব। আল্লাহ যেন কবুল করেন।
বৃদ্ধ শাহজাহান হাওলাদার বলেন, একজন হাফেজ পরিবারের ৭০ জনকে জান্নাতে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। আমি সাধারণ শিক্ষায় পড়াশুনা করায় হাফেজ হতে পারিনি। ভেবেছি ছেলে-মেয়েদের হাফেজ বানাব। তারা আমাকেসহ পরিবারের লোকজনকে জান্নাতে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। সন্তানদের সবাইকে হাফেজ বানিয়েছেন। তাদের স্ত্রী, স্বামী ও সন্তানরাও হাফেজ হয়েছেন। এটা দেখে যেতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া।
কালাইয়া রাব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. এ এস এম আব্দুল হাই বলেন, শাহজাহান হাওলাদার পরিবার অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত। তিনি নিজে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পরিবারের সকলদের পবিত্র কোরআনে হাফেজ করেছেন, এটা বিরল।
কোরআনের হাফেজদের সংগঠন ‘হুফফাজুল কোরআন’ বাউফল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো. আনিছুর রহমান বলেন, একই পরিবারের সবাই হাফেজ। আমার কাছে মনে হচ্ছে শুধু দেশে না, বিশ্বে দৃষ্টান্ত। আমরা এই পরিবারের আরও সাফল্য কামনা করছি।