সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের এজেন্সিসহ ১২টির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। তবে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত অর্থের পাঁচগুণ অতিরিক্ত টাকা নেওয়া ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের রিক্রুটিং এজেন্সিসহ ১২টি এজেন্সির বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তালিকায় মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের এজেন্সিও রয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে ৫ গুণ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। তারা ৬৭ হাজার শ্রমিকের কাছ থেকে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে দুদক।
১২টি মামলা আসামিরা হলেন, মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মালিক আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী কাশমিরি কামাল। মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ ৬ হাজার ২৯ কর্মীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে।
মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল ও তার আরেক প্রতিষ্ঠান ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল ২৯৯৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা হয়।
ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমের প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ওভারিসিজ। প্রতিষ্ঠানটি ৬৬৫৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছে। নিজাম হাজারী ও তার স্ত্রীসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম. আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মালিক আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল ৫৪৫৮ ব্যক্তির কাছ থেকে ৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকার অর্থ বেশি আদায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও ফেনী ৩ আসনের সাবেক এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও তার মেয়ে তাসনিয়া মাসুদকেও আসামি করে মামলা করেছে দুদক। তাদের প্রতিষ্ঠানটি ৭১২৪ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা বেশি অর্থ আদায় করেছেন। ওই মামলার অপর দুই আসামি হলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মুকিত ও মেহবুবা আফতাব সাথি।
৩৭৮৮ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়ে মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন (প্রাঃ) লি. এর স্বত্বাধিকারী নুর আলী, তার স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী ছাড়া ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন আহমেদ এবং খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লি. এর মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলী দুদকের মামলায় আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৭৭৮৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।
৮৫৯২ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের দায়ে ঢাকা ২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক বেনজীর আহমদকে আসামি করে মামলা করেছে দুদক।
বি এম ট্রাভেলস লি. স্বত্বাধিকারী ও বাড্ডার সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তারকে ৮০৯৩ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের দায়ে মামলা করে দুদক।
৪২১৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের দায়ে বিএনএস ওভারসিজ লি. এর মালিক ও ইঞ্জিনিয়ার ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত যিনি সাবেক যুবলীগ নেতা আবুল বাশারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
রুবেল বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনিকে আসামি করে মামলা করেছে দুদক। প্রতিষ্ঠানটি ২৮৪৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।
৩৭৯৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের দায়ে দি ইফতি ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী রুবেল ও বোরহান উদ্দিন পান্নাকে আসামি করেছে দুদক।