রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানো কেন অসাংবিধানিক নয়, রুল জারি

রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানো কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতিকে দেশের প্রধান বিচারপতির শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। ১০ মার্চ গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরাজীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারুক এই রিট আবেদন করেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারুক বলেন, রিটে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
রিটের যুক্তিতে রিটকারি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টকে শপথবাক্য পাঠ করান সেই দেশের প্রধান বিচারপতি। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বা রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার পদ্ধতির দেশেও রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির কাছে। এটা বিশ্বব্যাপী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজ।
কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট করা। এতে সংবিধানের গভীর দার্শনিক ভিত্তি থেকে রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে—রাষ্ট্রপতি সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক নির্দেশনা।
বাংলাদেশে দুটি পদকে সংবিধান প্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা দিয়েছে। পদ দুটি হলো—রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি। (এই দুজনের পদ ও পদবির সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের নাম জড়িত) সংবিধানের ৪৮(১)-এ বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন। যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপ্রধান রূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন।’ সংবিধানের ৯৪ (২)-এ বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন।”
৭২ সালের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বিচারপতির মর্যাদা সুরক্ষার প্রশ্নে শপথ ও ঘোষণার তৃতীয় তফসিলে বলা হয়েছিল, ‘রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে।’
এগুলো আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি, যা সংবিধান প্রণয়নের সময়ই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত।